সুনামগঞ্জ পৌর শহরের উত্তর আরপিননগর এলাকার বাসিন্দা লেইচ নূর মিয়া স্বপ্ন দেখেছিলেন মাছ চাষ করে লাভবান হবেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকবেন সুখে-শান্তিতে। সেই স্বপ্ন সত্যি করতে ঋণ করে টাকা নিয়ে তিনটি পুকুরে শুরু করেছিলেন তার স্বপ্নের মাছ চাষ। কিন্তু হঠাৎ সেই স্বপ্ন নিমিষেই শেষ হয়ে গেল।
সম্প্রতি সুনামগঞ্জে উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যার পানিতে ভেসে যায় লেইচ নূর মিয়ার সেই সোনালি স্বপ্ন। ভেসে যায় তার সব পুকুরের মাছ। বানের জলে পুকুরের সকল মাছ ভেসে যাওয়ায় লেইচ নূর মিয়া এখন দিশেহারা।
রোববার (১৭ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লেইচ নূর মিয়ার পুকুরে সব মাছ ভেসে গেছে। সব হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব।
জানা যায়, ঋণ নিয়ে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কুরবান নগর ইউনিয়নে মনরপুর গ্রামে ২টি পুকুরে ৪০ লক্ষ টাকার মাছ ও সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পশ্চিম হাজীপাড়ায় ১টি পুকুরে ৫ লক্ষ টাকার রুই, কাতলা, কারফু, গ্রাসকার্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেছিলেন লেইচ নূর মিয়া। এই মাছগুলো বড় হয়ে বিক্রি করলে সকল ঋণ শোধ করে তার লাভ হতো ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা।
কিন্তু তার চোখের সামনেই বানের জলে ভেসে গেছে এই স্বপ্ন। স্বপ্ন বানের জলে ভেসে যাওয়ার দৃশ্য চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না লেইচ নুর মিয়ার।
শুধু তাই নয়, বিগত ২০২০ সালের বন্যায়ও লেইচ নুর মিয়ার আরও তিনটি পুকুর থেকে ৩০ লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গিয়েছিল। যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ২০২২ সালে বড় ঋণ নিয়ে নতুন করে আবারও মাছ চাষ শুরু করেছিলেন লেইচ নুর মিয়া।
ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষি লেইচ নূর মিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেলাম। অনেক আশা নিয়ে তিনটি পুকুরে ৪৫ লক্ষ টাকার মাছ চাষ করেছিলাম। ভেবেছিলাম মাছগুলো বড় করে বিক্রি করতে পারলে গতবারের ঋণসহ এবারের ঋণও শোধ করে কিছুটা লাভবান হবো। কিন্তু বন্যার পানি আমার সব মাছ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। সেই সাথে আমাকেও মেরে রেখে গেছে। এখন আমি এত মানুষের ঋণ কিভাবে শোধ করব সেই চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছি।
লেইচ নুর মিয়ার ব্যবসার অংশীদার সোহেল মিয়া বলেন, আমরা একসাথে ১০ একর পুকুরে ৪৫ লাখ টাকার মাছ চাষ করেছিলাম। বানের পানিতে সব মাছ ভেসে গেছে। কয়েকটি দোকান থেকে মাছের খাদ্য বাকিতে এনেছিলাম। এখন চিন্তায় আছি তা কিভাবে পরিশোধ করব? আর মাছ কেনার জন্য ঋণ করেছিলাম। সেটা কিভাবে শোধ করব এ চিন্তায় আমাদের খাওয়া-ঘুম নেই।
সুনামগঞ্জ জেলার মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মন্ডল জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তারা যাতে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে সরকার সেই ব্যবস্থা করবে।