সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘরে জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) উদ্যোগে শিল্পপণ্য মেলায় সার্কাসের নামে রাতভর চলছে অশ্লীল নাচ-গান। আর এসব প্রদর্শনীতে দর্শক সারিতে ভিড় করছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও এলাকার যুবসমাজ।
এ অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে যারা সার্কাস প্রদর্শনী দেখার জন্য ভেতরে ঢুকছেন, তারা পড়ছেন বিপাকে। সার্কাসের নামে অশ্লীল নাচ দেখে তারা বেরিয়ে এসে মেলা কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকে বলছেন, পুলিশের দাপটে সুনামগঞ্জে মেলার নামে চলছে অশ্লীল নাচ-গান।
জানা গেছে, এই মেলাটি পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) আয়োজনে হলেও পরিচালনা করছে অন্য একটি পক্ষ। তাদেরকে না কি মেলা লিজ দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, পুনাক শিল্পপণ্য মেলা উপলক্ষে মাঠের পেছনে তৃপ্তি সার্কাস নামে একটি বিনোদন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ওই কেন্দ্রে প্রবেশ টিকেটের মূল্য ৮০ থেকে টাকা। সেখানে হিরো আলম, রিয়া মনি, দয়াল বাবা এমনকি সিনেমার অভিনেত্রী নাসরিন, রত্নাসহ অনেকেই অশ্লীল নাচ পরিবেশন করেন। আর সেই নাচ দেখতে তৃপ্তি সার্কাসের সামনে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়েছেন যুবক ও স্কুল পড়ুয়া কিশোররা।
আর এসব না জেনে সুনামগঞ্জের দূর-দূরান্ত থেকে এসে পরিবার নিয়ে যারা সার্কাসের ভেতরে ঢুকেছেন তারা পড়েছেন বড় অস্বস্তিতে। অনেককেই সার্কাসের ভেতরে এমন অশ্লীল নাচ দেখে পরিবার নিয়ে মুখ লুকিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
জানা যায়, গত ২৩ নভেম্বর সুনামগঞ্জ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) উদ্যোগে পুনাক শিল্পপণ্য মেলার উদ্বোধন করেন পুনাক’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-কোষাধ্যক্ষ উম্মে কুলসুম রুপা আহম্মেদ। পরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ।
তবে মেলা উদ্বোধনের পর থেকে ভেতরে সার্কাসের বদলে দেখানো হচ্ছে অশ্লীল নৃত্য। এমন অভিযোগ এনে স্থানীয়রা বলেন, ২৫ দিন ধরে পুনাক মেলার নামে সন্ধ্যার পর চলছে অশ্লীল নৃত্য। দিনে মেলা প্রাঙ্গণে সাধারণ দর্শনার্থীর উপস্থিতি কম থাকলেও রাতের চিত্র পুরো ভিন্ন। অশ্লীল নাচ-গান দেখতে এক শ্রেণির দর্শকের উপস্থিতি ব্যাপক বেড়ে যায়। এসব চলতে দেওয়ায় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
এলাকার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই মাইকে উচ্চস্বরে অশ্লীল গান-বাজনা শুরু হয়। এ কারণে তাদের পড়ালেখায় ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে।
পৌর শহরের তেঘরিয়ার বাসিন্দা লিটু মিয়া বলেন, পুনাক মেলায় সার্কাসের নামে যে অশ্লীল নাচ-গান চলছে, তাতে উঠতি বয়সের কিশোর ও যুবকেরা নষ্ট হতে বাধ্য। আমরা কিছু বললেই মেলার আয়োজক লোকজন হুমকি-ধমকি দেয়, পুলিশের ভয় দেখায়। পুনাক মেলা নাম হওয়ায় যেন তারা অশ্লীল কাজের লাইসেন্স পেয়ে গেছে। যুবসমাজকে রক্ষায় আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করি, অথচ আজ পুলিশের দাপটে মেলা কর্তৃপক্ষ যা শুরু করেছে তাতে যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা মামুন আহমেদ বলেন, মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম। তখন মেলার পেছনে অবস্থিত তৃপ্তি সার্কাসে নানা রকমের প্রদর্শনী দেখবে বলে পরিবারের ছোট বোনেরা বায়না ধরে। কিন্তু সার্কাসের ভেতরে ঢুকে আমি অবাক! সার্কাসের নামে যে কেমন অশ্লীল নৃত্য হয় সেটা মুখে বলতে পারব না। পরে মুখ লুকিয়ে পরিবার নিয়ে সার্কাসের ভেতর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা জাবেদ মিয়া জানান, পুলিশের নামে মেলায় অশ্লীল নৃত্য চলছে- এটা সত্যি দুঃখজনক। এদিকে পুলিশের নজর দেওয়া উচিত।
পুনাক শিল্পপণ্য মেলার দায়িত্বে থাকা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আপনারা শুধু অভিযোগগুলো দেখলেন। এখানেতো বিনোদনেরও অনেক বিষয় আছে। আর অশ্লীলতা বলতে কিছু নাই। টিভিতেওতো আমরা গানের সাথে নাচ দেখি। এখানেও সেরকম। এটা তো অন্যায় কিছু না। আমরা কোনো প্রকার অশ্লীলতা করছি না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) রিপন কুমার মোদক বলেন, পুনাক মেলায় অশ্লীল নাচ-গানের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেলা কর্তৃপক্ষ পুলিশের দাপট দেখিয়ে মেলায় অশ্লীল নাচ-গান করছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এমনতো হওয়ার কথা না। তারপরও বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, মেলা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পৌরবাসী আমাকে নানা অভিযোগ দিচ্ছেন। তবে আমি শুধু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, আর যাওয়া হয়নি। যদি সার্কাসের ভেতরে অশ্লীল নাচ-গান হয়ে থাকে, তাহলে আপনারা সাংবাদিকরা এটা লিখুন। আর আমরা চাই এসব অশ্লীল গান-বাজনা বন্ধ হোক।