সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৌম্য চৌধুরীর মৃত্যুতে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। তার মৃত্যু কারণ হিসেবে কথিত ‘সুদখোদের’ চেক মামলাসহ রয়েছে নানা রহস্য।
গেল শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
জানা যায়, শনিবার রাত ১০টার দিকে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের ফুলবাড়ি এলাকায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কমলগঞ্জ থানা পুলিশ। এরপর কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখান থেকে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। তবে তার স্ত্রী ইলা চৌধুরীসহ পরিবারের দাবী সংঘবদ্ধ সুদখোর হাবিবুর রহমান হবু গংদের আর্থিক ও সম্মানহানিকর নির্যাতনে স্বামী সৌম্য চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে মৃত্যুর একদিন আগে সৌম্য চৌধুরীর ফেসবুক আইডি থেকে স্থানীয় কয়েকজন দাদন ব্যবসায়ীর টাকা ও মামলার চাপের বিষয়ে একটি পোস্ট দেন। স্ট্যাটাসে এ পরিণতির জন্য ওই দাদন ব্যবসায়ীদের দায়ী করেন তিনি। সৌম্য চৌধুরীর মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা দাদন ব্যবসায়ীদের শাস্তি দাবীতে সরব হয়ে ওঠেন।
সৌম্য চৌধুরীর স্ত্রী ইলা চৌধুরী বলেন, স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ী হবু, জসিম, চিনু ঠাকুর, সজল দাস, অসীত দেবনাথ, পুতুল আমাদের সাজানো-গোছানো সংসার তছনছ করে দিয়েছে। সুদের টাকার জন্য তারা আমার স্বামীর জীবন বিষিয়ে তুলেছিল। হবু, জসিম তাদের গুন্ডাবাহিনী নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে হুমকি-ধমকি দিয়ে আমার স্বামীর কাছ থেকে ব্লাংক চেক নিয়ে যায়। বাড়ির জায়গা বিক্রি করে দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়ার মাধ্যমে তাদের টাকা পরিশোধ করেন আমার স্বামী। তারা আদালতে চেকের মামলা দেয়। মামলায় আমার স্বামীর সাজা হয়। ১০/১২ দিন আগে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।
স্বামীর মৃত্যুর জন্য হবু, ‘জসিমকে দায়ী করে ইলা চৌধুরী বলেন, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় তারা আমাদের হুমকি দিচ্ছিল।’
কথিত সুদখোর হবিবুর রহমান হবু বলেন, ‘আমার বিষয়টি বসে আলোচনার মাধ্যমে নিস্পত্তি হয়েছে। আমার ১৯ লাখ টাকা মধ্যে ১ লাখ টাকা পাওনা ছিল।’
দিরাই দোওজ গ্রামের জসিম উদ্দিন বলেন, আমার অরিজিনাল ১৯ লাখ টাকা পাওনা ছিল। আমি ধান কেনার জন্য দিয়েছিলাম। পরে লাভসহ ২৯ লাখ টাকা পাওনা বাবদ মামলা দায়ের করি।’
কমলগঞ্জ থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, শনিবার রাতে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের ফুলবাড়ি এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখান থেকে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। লাশ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে সৌম্য চৌধুরীর লাশ গ্রামের বাড়ি রাজানগর এসে পৌছলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনরা জানান, রাতেই তার লাশের সৎকার করা হবে।