সিলেট মহানগরীর পাঠানটুলায় নর্থ-ইস্ট সিএনজি পাম্পে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচজন দগ্ধের ঘটনায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।
রবিবার (২১) জানুয়ারি বিকেলে ঘটা এ দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধরা বর্তমানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। যারমধ্যে দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিসের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্মাণ কাজ চলাকালীন লোহার রড কাটতে গিয়ে গ্রাইন্ডিং মেশিনের স্ফুলিঙ্গ থেকে এ আগুনের সূত্রপাত। বেশ কয়েকদিন থেকে নগরীর ব্যস্ততম এ সড়কে কাজ চলাকালে কোনো ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থাই নিশ্চিত করেনি সিসিক কর্তৃপক্ষ। নিয়মানুযায়ী এ ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে আলাদা করে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা মানা হয় নি। এছাড়া এসব কাজের ক্ষেত্রে আগে থেকে ফায়ার সার্ভিসকে অবগত করারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে তাও মানা হয় নি।
যদিও, অগ্নিকাণ্ড ও ৫ জন দগ্ধ হওয়ার দায় নর্থ-ইস্ট ফিলিং স্টেশনকেই দিলেন নির্মাণ কাজ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আব্দুল মোমিন মামুন। তিনি সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘আমরা কাজ শুরুর আগে থেকেই সিএনজি পাম্প কর্তৃপক্ষকে পাম্প বন্ধ রাখার অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তারা কোনো সাড়া দেন নি। এছাড়া সিসিক প্রকৌশল বিভাগ স্থানীয় কাউন্সিলরকে সাথে নিয়েও পাম্প কর্তৃপক্ষকে বোঝানো হয়। এ অবস্থায় তাদের সম্মতি না পেয়ে আমরা ৫/৬ মাস কাজ বন্ধও রেখেছিলাম। এরপর তারা আমাদেরকে জানিয়েছেন আমরা যেদিন কাজ করবো তাদেরকে বললে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
মামুন বলেন, আজ যখন আমরা কাজ শুরু করি তখনও পাম্প কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সারাদিন কোনো সমস্যা হয় নি। বিকেলে তারা একটি জ্বালানী তেলবাহী গাড়ি আনলোড করতে গেলেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, তারা এভাবে জ্বালানী তেল আনলোড করবেন সেটা বললেও আমরা কাজ বন্ধ রাখতাম, কিন্তু তারা তা করে নি।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও সিসিক প্রধান নির্বাহী ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী। এসময় মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক এখানে আছি, দগ্ধদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে।
এসময় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সিসিক প্রধান নির্বাহীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। কমিটির অন্যরা হলেন- সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরহাদ মোহাম্মদ হাওলাদার এবং জালাবাদ গ্যাস টি এন্ড ডি সিস্টেম লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারোশন) প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান মাহমুদ।
এসময় কিছুদিন আগে মিরাবাজারে সিএনজি পাম্পে অগ্নিকান্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাই।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ সিসিকের ৫ শ্রমিককে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অগ্নিদগ্ধরা হলেন- মন্তাজ মিয়া (৩৫), লিটন মিয়া (২৫), আলম মিয়া (২৩), মতি মিয়া (৬০) ও সুভাষ দাশ (৫৫)।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটের প্রধান ডা. এম এ মান্নান জানান, অগ্নিদগ্ধ ৫জনের মধ্যে ২ জনের শরীরের ৩৫ ভাগ পুড়ে গেছে। বাকি দুইজনের ৩০ ভাগ আর একজনের ২৮ ভাগ দগ্ধ হয়েছে।
ডা. এম এ মান্নান বলেন, আমাদের হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে মোট ৫ জন রোগী এসেছেন, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের মুখমন্ডলসহ শরীরের প্রায় ৩৫ ভাগ পুড়ে গেছে। মুখমণ্ডল ও কন্ঠনালী পোড়া ভালো লক্ষণ না। এক্ষেত্রে পোড়ার পরিমাণ কম হলেও তাদেরকে গুরুতর হিসেবেই ধরে নিতে হবে।
তিনি বলেন, এখনো চিকিৎসা চলছে, তবে প্রয়োজন পড়লে তাদের আইসিইউ-তে স্থানান্তর করা হতে পারে। অবস্থা খারাপ হলে প্রয়োজনে তাদেরকে ঢাকাতেও স্থানান্তর করা হতে পারে।