দুদিন পরই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ। শেষ মুহূর্তের প্রচারণার পর চলছে নানা হিসেব নিকেশ। মূল আলোচনায় থাকা দুই প্রার্থী নিজেদের ভোট ব্যাংকের পাশপাশি বিরোধী ভোট টানতেও মরিয়া। এমন অবস্থায় নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের বাইরে থাকা ‘বিএনপির ভোট ব্যাংক’ জয় পরাজয়ে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে বলে মত অনেকের।
দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে এবারের সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। দুইবারের মেয়র আরিফুল হক প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন নির্বাচন থেকে। নির্বাচনের বাইরে আছেন বর্তমান পরিষদের একাধিক নির্বাচিত কাউন্সিলরও। তবে দলীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাউন্সিলর পদে বিএনপির প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী প্রার্থী হয়েছেন। যদিও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে তাদের আজীবন বহিস্কার করেছে দলটি। তবে তাদের নিজস্ব ভোটার রয়েছেন প্রচুর।
বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে নেই, তাই এই ভোটারদের ভোট মেয়র নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থীই এই ভোটারদেরকে নিজেদের পক্ষে টানার ছক কষছেন।
তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় ইতোমধ্যে অনেককে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করার কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া দলীয় নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে যেতেও নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ফলে বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীই ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন না।
তবে বিএনপির ভোটাররা ভোট দেবেন ধরে নিয়েই প্রচারণা চালাচ্ছেন দুই মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও নজরুল ইসলাম বাবুল।
প্রচারণার শুরুতে দুজনই বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। আরিফের বিরুদ্ধে অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও লুটপাটের অভিযোগ তোলেন তারা। তবে গত কয়েকদিন ধরেই আনোয়ারুজ্জামান ও বাবুলকে আরিফের সমালোচনার বদলে প্রশংসা করতে দেখা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে আনোয়ারুজ্জামানের সমর্থনে এক পথসভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকও বিএনপির ভোট নিজেদের পক্ষে আনার কথা বলেছেন।
নানক বলেন, ‘বরিশাল সিটির ভোটের ফল প্রমাণ করে বিএনপির ভোটাররাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। সিলেটেও এমনটি হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বিএনপির লোকজনও আনোয়ারুজ্জামানকে ভোট দেবেন। তাদের ভোট নিজেদের পক্ষে আনার লক্ষ্যেই আপনাদের কাজ করতে হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ‘বিএনপি নির্বাচনে না থাকলেও দলটির অনেক কর্মী-সমর্থকই ভোট দিতে যাবেন। দলটির কাউন্সিলর প্রার্থীরাই তাদেরকে কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। এই ভোট আমাদের প্রার্থীর পক্ষে আনতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
এছাড়া সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগরীতে অনেক কাজ করেছেন, বিশেষ করে রাস্তাঘাট প্রশস্ত করেছেন। এর জন্য তাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। তবে কিছু কাজ অপরিকল্পিতভাবে হয়েছে। নির্বাচিত হলে আরিফুল হকের নেয়া প্রকল্পগুলো শেষ করা হবে। যে জায়গায়, পুরনো প্রকল্পের সাথে নতুন পরিকল্পনা দরকার সেখানে নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে তাঁর রেখে যাওয়া কাজ সম্পাদন করা হবে।’
অপরদিকে জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলও বিএনপি-জামায়াতের ভোট নিজের পক্ষে টানতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ বিরোধিতা থেকে এই অংশের ভোটাররা লাঙলেই ভোট দেবেন বলে তার বিশ্বাস।
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী একের পর এক নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন। অথচ ইসি এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ভোটাররা সেসব দেখছেন। সিলেটের ভোটাররা সচেতন, তাই তারা এসব অনিয়মের জবাব ভোটের মাধ্যমেই দেবেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি সুষ্ঠু ভোট হলে জনগণ লাঙ্গলেই তাদের আস্থার ভোট দেবেন।’
তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা ভোটে অংশ নেবেন না জানিয়ে সিলেট মহানগর বিএনপি নেতা সালেহ আহমদ খসরু বলেন, ‘এই প্রহসনের নির্বাচনে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা এখন সাবেক, আর সাবেকদের কথায় বিএনপির কর্মী সমর্থকরা ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন এটা বিশ্বাস করারা অবকাশ নেই।’
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যারা এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে যেমন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাদের পক্ষে যারা কাজ করবেন তাদের ব্যাপারেও দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যত্যয় হবে না।