সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদের মৃত্যুর ঘটনায় সাব-ইন্সপেক্টর আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারে আইনানুগ উদ্যোগ গ্রহণ না করায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের তৎকালীন সহকারী পুলিশ কমিশনার নির্মলেন্দু চক্রবর্তীকে ‘তিরস্কার’ করা হয়েছে।
নির্মলেন্দু চক্রবর্তী বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ’হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নির্মলেন্দু চক্রবর্তী ও ইতঃপূর্বে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে কর্মকালে গত ১১/১০/২০২০ তারিখ রায়হান আহমেদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই (নি.) আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্য কর্তৃক শারীরিকভাবে নির্যাতনের ফলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আপনার যথাযথ তদারকির অভাবে ভুল ধারায় সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় ১২/১০/২০২০ তারিখ মামলা নং ২০ দ. বি. ৩০২/৩৪ ধারায় এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৫(১)/১৫(২) (১৫(৩) ধারায় মামলা রুজু হয়। আপনি অনুসন্ধান কমিটির সদস্য হিসেবে অনুসন্ধানকালে পুলিশ সদস্য দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের কারণে রায়হান আহমেদের মৃত্যু ঘটে, যা ফৌজদারি অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও এসআই (নি.) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারে আইনানুগ উদ্যোগ গ্রহণ না করে শুধু বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করে ১০/৩/২০২১ তারিখ অভিযোগনামা ও অভিযোগ-বিবরণী জারি করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১১/০৯/২০২১ তারিখে কারণ দর্শানোর জবাব প্রদান করে ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন করেন এবং ১৫/১২/২০২১ তারিখ তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়।’
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘তার দাখিল করা কারণ দর্শানোর জবাব, ব্যক্তিগত শুনানিতে পক্ষদের প্রদত্ত বক্তব্য এবং প্রাসঙ্গিক সকল তথ্যাদি বিবেচনা করে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে গুরুদণ্ড আরোপের সম্ভাবনা থাকার অভিযোগগুলো তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জিয়াউর রহমানকে এ বিভাগীয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক গত ২৩/১১/২০২২ তারিখে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে নির্মলেন্দু চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রমাণে প্রমাণিত হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(ক) বিধি মোতাবেক ‘অদক্ষতা’ প্রমাণিত হওয়ায় একই বিধিমালার বিধি ও এর উপবিধি ২(ক) মোতাবেক ”তিরস্কার” লঘুদণ্ড প্রদান করা হলো।’
২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হান আহমদকে নির্যাতন করা হয়। ১১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়।
এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রধান অভিযুক্ত আকবরকে ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত বছরের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পিবিআই। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (৩২) প্রধান অভিযুক্ত করা হয়।
অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন, সহকারী উপপরিদর্শক আশেক এলাহী (৪৩), কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ (৩২), টিটু চন্দ্র দাস (৩৮), ফাঁড়ির টুআইসি পদে থাকা সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন (৩২) ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (৩২)। অভিযোগপত্রভুক্ত ছয় আসামির মধ্যে পাঁচ পুলিশ সদস্য কারাবন্দী। আসামি আবদুল্লাহ আল নোমান পলাতক।