চলতি বছরের মে-জুন মাসে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে আঘাত করা বন্যায় বিপর্যস্ত শিশুদের সঙ্গে দেখা করতে সিলেট সফর করছেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের জাতীয় শুভেচ্ছাদূত বিদ্যা সিনহা মিম।
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) ইউনিসিফের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রায় দুই মাসব্যাপী ভয়াবহ বন্যার ফলে খাদ্য, পানি ও স্যানিটেশন সংকটে ৩৫ লাখ শিশুসহ ৭২ লাখ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। বন্যাকবলিত এলাকায় শত শত স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বহু পরিবার বাধ্য হয় তাদের জিনিসপত্র ছেড়ে জরুরি আশ্রয় নিতে।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় শিশুদের সঙ্গে কথা বলার পর বিদ্যা সিনহা মিম বলেন, সিলেটে শিশু ও তাদের বাবা-মায়েদের কাছ থেকে যে গল্পগুলো শুনেছি, তা হৃদয়বিদারক। বন্যার কারণে তাদের জীবন ওলট-পালট হয়ে যাওয়ার মাঝেও তারা অবিশ্বাস্য রকমের দৃঢ়তা দেখিয়েছে। আমাদের অবশ্যই তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠায় সহায়তা করতে হবে।
১০ বছর বয়সী নাজিমুল ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত মিমকে বলে, প্রথমে যখন ঘরে পানি আসতে শুরু করে তখন আমি কিছুই বুঝতেছিলাম না। আমার জামা-কাপড়, বই, ঘরের সব জিনিস কোনো কিছুই বাদ ছিল না। সবকিছু পানিতে ভেসে যায়। আমাকে যদি স্কুলে (আশ্রয়কেন্দ্রে) না নিয়ে আসা হতো, তাহলে আমিও ভেসে যেতাম। তিন-চারদিন না খেয়ে ছিলাম। আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পর সেখানে মুড়ি, চিড়া এসব শুকনো খাবার দেয়।
বন্যার পানি কমে যাওয়ার কয়েক মাস পরও লাখ লাখ পরিবার এখনও সেই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ইউনিসেফ জরুরি পানি, স্যানিটেশন, নিরাপত্তা, পুষ্টিসামগ্রী ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে এবং পানিতে ডুবে যাওয়া, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা, সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে শিশুদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে সরকারের জরুরি বন্যা মোকাবিলা কার্যক্রমে সহায়তা করে। এখন পর্যন্ত ইউনিসেফের অব্যাহত সহায়তা থেকে উপকৃত হয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ, যাদের ৪০ শতাংশ শিশু।
দুই দিনের সফরে মিম সরাসরি দেখেছেন কীভাবে ইউনিসেফ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ল্যাট্রিন, পানি সংগ্রহ কেন্দ্র, স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো পুনরায় চালু ও পুনর্নিমাণে ভূমিকা রাখছে। মিম সমাজকর্মীদের সঙ্গেও দেখা করেন, যারা বন্যার পর শিশুদের ও তাদের পরিবারকে সহায়তা করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কথা বলেন।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, মিমের সফর আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, পানি কমার পরও বাংলাদেশের শিশুরা বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।
২০২২ সালের মে মাসে বাংলাদেশে ইউনিসেফের জাতীয় শুভেচ্ছাদূত নিযুক্ত হওয়া মিম এই সফরে সিলেটের একটি চা-বাগান এবং ইউনিসেফ-সহায়তাপুষ্ট একটি কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিশু-কিশোরদের সঙ্গেও দেখা করেন।