বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় প্রকৃতিকন্যা সিলেটের প্রধান প্রধান পর্যটন স্পট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকেলে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ও বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে সাদাপাথর, জাফলং, বিছানাকান্দিসহ অন্যতম পর্যটন স্পটগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় পর্যটন স্পটগুলোতে যাওয়ার পরিবেশ নেই। যার কারণে সিলেটের প্রধান প্রধান পর্যটন স্পট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে কোনো পর্যটক কোথাও আটকা পড়েননি বলে জানান তিনি।
গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানিতে তলিয়ে গেছে সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে বিভিন্ন এলাকা। সুরমা-কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বুধবার থেকে কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে। বুধবার (২৯ মে) রাতে কুশিয়ারা ও সুরমা নদীর অন্তত ১৫টি স্থানে ডাইক ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবশে করতে থাকে। ডাইক ভেঙে প্রবল স্রোতে পানি ঢুকে জকিগঞ্জের অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। একইভাবে কানাইঘাট উপজেলায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নতুন করে বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকালে নোটিশ দিয়ে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথরসহ সকল পর্যটন স্পট বন্ধের ঘোষণা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ।
এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি উল্লেখ করেন, অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলো পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সাদাপাথর পর্যটন ঘাটসহ সকল পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
এদিকে, সিলেটে বন্যা দুর্গত পাঁচ উপজেলায় বিতরণের জন্য শুকনা খাবার, চাল ও নগদ টাকা উপজেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্য দুর্গতদের জন্য সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী সিলেটের পাঁচটি উপজেলার প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট পাঁচটি উপজেলা গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলার বন্যা দুর্গত বাসিন্দাদের জন্য এক হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ৭৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা ত্রাণসামগ্রী হিসেবে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব উপজেলায় আরও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
জেলা প্রশাসন আরও জানায়, পানি বন্দি হওয়া বাসিন্দাদের আশ্রয়ের জন্য সিলেটে ৫টি উপজেলায় ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৫৬টি, জৈন্তাপুর উপজেলায় ৪৮টি, কানাইঘাট উপজেলায় ১৮টি, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৩৫টি ও জকিগঞ্জ উপজেলায় ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে।