সিলেটে পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব অনুষ্ঠিত

সিলেটে পুষ্টি-প্রথম আলো আঞ্চলিক স্কুল বিতর্ক উৎসবে সুনামগঞ্জের এইচ এম পি উচ্চ বিদ্যালয় দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ‘যোগ দাও যুক্তির মেলায়’ প্রতিপদ্যে শুক্রবার সকাল থেকে সিলেট নগরের সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে এ উৎসব হয়।

এতে রানার্সআপ হয়েছে সিলেটের আম্বরখানা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। বিতর্কে দুটি পক্ষ থাকে। এর মধ্যে বিতর্কের বিষয় বস্তুর ওপর পক্ষে ও বিপক্ষে বক্তব্য দিতে হয়। যে দল তাদের বক্তব্যে যুক্তি দেখাবে সেটি সত্য হিসেবে মেনে নিতে হবে।

বিকেলে সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সম্মেলন কক্ষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, বিতর্কের মূল স্ক্রিপ্ট হচ্ছে সত্য ও যুক্তি। সত্য ও যুক্তি না থাকলে সমাজ পশ্চাৎপদে যাবে। যে পশ্চাৎপদতা নেমে এসেছিল ইউরোপে। ইউরোপের ‘রেনেসাঁ’ পুনর্জাগরণ হয়েছিল মুক্ত চিন্তা, সত্য ও যুক্তির মাধ্যমে। বর্তমানে আমারা ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি। এ জন্য সকলকে স্মার্ট, সত্য, যুক্তি, চিন্তা, চেতনা ধারণ করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের মূল বিষয় হচ্ছে যেটি সত্য সেটিই বাস্তব।

তিনি বলেন, প্রথম আলো শুধু একটি পত্রিকায় নয় একটি প্রতিষ্ঠান। প্রথম আলোর শিক্ষাপাতা শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সে সঙ্গে প্রথম আলো এসিড সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শেখায়। প্রথম আলো বন্যা দুর্গত এবং কোভিড পরবর্তী সময়ে অসহায়দের পাশে দাড়ায় এবং সমাজকে অনুপ্রাণিত করে। প্রথম আলো অদ্যম মেধাবিদের পাশে দাঁড়ায়। এ কারণে শুধু প্রত্রিকাটি প্রতিষ্ঠান হয়ে ঘুণে ধরা সমাজকে আলোর ঝলকানি দিচ্ছে।

অপর অতিথির সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ আল আসাদ মো. মাহমুদুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, বিতর্কের বিতার্কিকের বক্তব্য হবে যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্যতা। যুক্তি নির্ভর মানুষ মিথ্যাকে না বলে। যুক্তি মানুষকে আলোকিত করে। এ জন্য তিনি সবাইকে যৌক্তিক মানুষ হওয়ার আহ্বান জানান।

সমাপনী পর্বে বক্তব্য দেন, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব মোকাদ্দেস বাবুল, মু. আনোয়ার হোসেন রনি ও প্রণবকান্তি দেব। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিলেট প্রথম আলো বন্ধুসভার সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারহানা হক। সমাপনী পর্বের অতিথিদের বক্তব্য শেষে উৎসবের বিজয়ী ও রানারআপদের নাম ঘোষণা করেন প্রথম আলো সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমনকুমার দাশ।

উৎসবে চ্যাম্পিয়ন হওয়া এইচ এম পি উচ্চ বিদ্যালয় দলে ছিল ইমতিয়াজ আহমেদ, নাজমুল সালেহিন, এহতেশাম ইসলাম সৌমিক, ও ছাত্র মোয়াজ মাহমুদ। রানার আপ দল আম্বরখানা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ দলে ছিল রিয়াসা জাহান নুহা, ফাহিমা সুলতানা, সামিয়া পাঠান ও অর্পিতা হাওলাদার।

উৎসবে বারোয়ারি বিতর্কেও বিজয়ী হয় সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাবেয়া বসরি প্রিয়ন্তি।

এ ছাড়া উৎসবে দুটি ক্যাটাগরিতে কুইজ প্রতিযোগিতা হয়। নিম্নমাধ্যমিক কুইজে প্রথম হয় সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র মুত্তকি বিন মসিউর, সিলেট সরকারি মডেল স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী আনিশা রহমান, তৃতীয় হয় শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র হুসাইফা আহমেদ লাবীব।

মাধ্যমিক কুইজে প্রথম স্থান অধিকার করে শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর ছাত্র হাম্মাদ সাফওয়ান, দ্বিতীয় হয় সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে নমব শ্রেণীর ছাত্র হিমেল রায়, তৃতীয় হয় সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র মাদিহা আক্তার তানিয়া।

এর আগে সকালে বিতর্ক উৎসবের উদ্বোধনে সিলেট মেজরটিলা স্কলার্স হোম স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফয়জুল হক বলেন, ভবিষ্যতে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে বিজ্ঞান ও যুক্তিনির্ভর প্রজন্মের প্রয়োজন। আগামীতে দেশ স্মার্টভাবে পরিচালনা হবে। এতে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার হবে। রোবটের মাধ্যমে সকল কাজকর্ম পরিচালিত হবে। এআই প্রযুক্তির যুগে প্রবেশের পর অনেক দক্ষ জনশক্তি বেকার হয়ে যাবে। এ জন্য এখন থেকে এই এআই প্রযুক্তি যাতে পরিচালনা করতে সক্ষম হয় সেভাবে গড়ে উঠতে হবে।

তিনি বলেন, জ্ঞান আহরণের জন্য আমাদের বইয়ের কাছে যেতে হবে। আন্য একটি জ্ঞানের ভান্ডার হচ্ছে পত্রিকা। এজন্য পত্রিকা পড়তে হবে। পত্রিকার মধ্যে প্রথম আলোর তথ্যসূত্র নির্ভর যোগ্য। এ ছাড়া প্রথম আলো বিজ্ঞান চিন্তা ও কিশোর আলো নামে সাময়িকী বের করে যা থেকে বিভিন্ন জ্ঞান ও জিজ্ঞাসার তথ্য পাওয়া যায়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান, সরকারি অগ্রগামী বালিকা ও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট আবৃত্তিকার মোকাদ্দেস বাবুল। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলো সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমনকুমার দাশ।

অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে সিলেট অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম বলেন, ‘বিতর্কে যুক্তির মাধ্যমে তা অন্যের কাছে তুলে ধরতে হয়। যুক্তিতেই মুক্তি, এতেই সমাধান।’ বিতার্কিকদের ভালো নাগরিক হয়ে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান বলেন, পশু-পাখি ও মানুষের মধ্যে বড় পার্থক্য হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে মানুষই একমাত্র প্রাণী যে জ্ঞান ও শিক্ষা যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যায়। সে জ্ঞান যুক্তি দিয়ে বুদ্ধি দিয়ে অনুধাবন করতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে রয়েছি। এ সময়ের মানুষ ডিজিটাল। আগামীতে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হবো। এ জন্য আমাদের স্মার্ট হতে হবে যুক্তিতে বুদ্ধিতে। এর জন্য সবার আগে দেশকে ভালোবাসতে হবে।

সকাল থেকেই বিভিন্ন স্কুলের বিতার্কিকেরা উৎসবে আসতে শুরু করে। উদ্বোধনের আগে তারা বিতর্কবিষয়ক আড্ডায় মেতে ওঠে অগ্রগামী বালিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ প্রাঙ্গণে। উৎসবে সিলেট ও সুনামগঞ্জের ১০টি স্কুল অংশ নেয়। এগুলো হলো- সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে, আম্বরখানা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেট সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, স্কুলার্স হোম স্কুল অ্যান্ড কলেজ শাহী ঈদগাহ শাখা, শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা, ব্রিটিশ বাংলাদেশ স্কুল, সুনামগঞ্জের এইচ এম পি উচ্চ বিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়।

বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ আল আসাদ মো. মাহমুদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব মোকাদ্দেস বাবুল, মু. আনোয়ার হোসেন রনি, জাফর সাদেক শাকিল, সাইদুর রহমান ভূঞা, হুমায়ুন কবির জুয়েল ও প্রণবকান্তি দেব, বিতার্কিক সাকিব সাদমান, পান্না দাস, দীপ্ত দেব।

উৎসবের শেষ পর্বে বিজয়ী দল ও প্রতিযোগীদের পুরস্কার, সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়। সিলেট আঞ্চলিক বিতর্ক উৎসবে বিজয়ী দল ঢাকায় জাতীয় পর্বের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। উৎসব আয়োজনে সহযোগিতা করছে প্রথম আলো বন্ধুসভা। বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে সনাতন পদ্ধতিতে।