হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.) মাজার জিয়ারত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সিলেট সার্কিট হাউসে মতবিনিময় সভা শেষে মঙ্গলবার (২১ জুন) বেলা পৌনে ১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন। সেখান থেকে তিনি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান তিনি। এরপর প্রধানমন্ত্রীর বহনকারী হেলিকপ্টারটি ঢাকার উদ্দেশে সিলেট ছেড়ে যায়। সেই সাথে শেষ হলো প্রধানমন্ত্রীর ৩ ঘণ্টার সিলেট সফর।
সিলেট সার্কিট হাউসে উপস্থিত নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে এই বন্যা-প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচার মানসিকতা থাকতে হবে। সে কারণে আমাদের অবকাঠামোগত যত উন্নয়ন হবে সেগুলো মাথায় রেখে করতে হবে।
তিনি বলেন, সিলেট অঞ্চলে মাটি উঁচু করে আর কোনো রাস্তা করা হবে না, ‘এলিভেটেড’ রাস্তা হবে। এলিভেটেড রাস্তা হলে সেটা সহজে নষ্ট হয় না, বন্যার মতো দুর্যোগে যাতায়াতেরও সুবিধা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, যেকোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের পাশে থাকে। সরকার বা বিরোধী দল যেখানেই আওয়ামী লীগ থাকুক না কেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীরা সর্বদা সারাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের জন্য কাজ করছেন। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা অন্য যেকোনো দুর্যোগে আমরা সব সময় মানুষের পাশে থাকি এবং মানুষকে আমাদের সহায়তা অব্যাহত রাখব।
তিনি বলেন, যেকোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগ অন্যদের তুলনায় দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। সর্বোপরি আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে যাবে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে যান, যেখানে অনেকেই পৌঁছাতে পারেননি এবং ওই এলাকার ছবি তাকে পাঠিয়েছেন যা উদ্ধার প্রক্রিয়া সহজ করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই ছবি আমি সেনাপ্রধান, আমাদের অফিস, বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। তারা মানুষকে উদ্ধার করতে পেরেছে।
এর আগে সকালে হেলিকপ্টারে করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও তৎসংলগ্ন এলাকার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরিদর্শন শেষে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন। এরপর তিনি লালগালিচা দিয়ে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে প্রবেশ করেন। বিমানবন্দর থেকে সার্কিট হাউসে যান প্রধানমন্ত্রী। যেখানে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
বৈঠকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা, সিটি মেয়র, প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বক্তব্য শুনেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও সিলেট সেনানিবাসের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং বন্যা ও এর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
বিভাগীয় প্রশাসন জানিয়েছে, চারটি জেলার ৩৩টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেখানে ৪৫ লাখের বেশি মানুষ বন্যার পানিতে ডুবে আছে এবং ৪ দশমিক ১৪ লাখের বেশি মানুষ ১২৮৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
এছাড়া, বন্যা দুর্গতদের চিকিৎসার জন্য ৩শ’ টিরও বেশি মেডিকেল টিম কাজ করছে এবং ২৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং ১৩০৭ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে ।
অন্যদিকে বন্যায় ৭৪ হাজার হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে এবং ৪০ হাজার পুকুর ও হেচারি বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যাতে আনুমানিক ১৪২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।