সিলেটে দুই বাউলশিল্পীকে ধর্ষণ, জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি

সিলেটের দুই বাউল শিল্পীর সকল ধর্ষকদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন বাউল শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট সিলেটের নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি এ ব্যাপারে দায়েরকৃত অভিযোগের ব্যাপারে পুলিশি ভূমিকা খতিয়ে দেখারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (০৮ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাউল শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট সিলেটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শাহ তোফাজ্জুল ভান্ডারি।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কোম্পানীগঞ্জের পুটামারা গ্রামের ভানুলাল দাসের বাড়িতে গানের অনুষ্ঠানে যোগদান করতে ধর্ষিতরাসহ আরও কয়েকজন নারী বাউল শিল্পীকে নিয়ে গত ২ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে রওয়ানা হয়েছিলেন ইছাকলস গ্রামের শুকুর উদ্দিনের ছেলে মো. ফয়জুল ইসলাম (৪২) ও লালবর আলীর ছেলে ফটিক মিয়া (৪৫)। রাত সাড়ে ৯টার দিকে জালালাবাদ থানার শিবেরবাজার বাগজুর রাস্তার ব্রিজের কাছ থেকে দুই টিনএজ বাউল শিল্পী ও তাদের একজনের মাকে ফয়জুল ও ফটিক মিয়ার সহযোগীতায় অজ্ঞাতনামা আরও ৬/৭ জনের একটি দল রামদা চাকু ইত্যাদি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে বাছনা বিলে নিয়ে যায়। পরে মায়ের সামনেই তার মেয়ে বাউল শিল্পী (১৯) কে ও অপর ১৫ বছরের কিশোরী শিল্পীকে অস্ত্রের মুখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। এই নারকীয় নির্যাতন চলতে থাকে টানা ৪/৫ ঘন্টা।

এদিকে অস্ত্র দেখিয়ে অপহরণের পরপরই তাদের নিয়ে যাওয়া প্রাইভেট কারের চালক ৯৯৯- এ কল দিলে জালালাবাদ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকায় অভিযান চালায়। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ধর্ষকরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ফয়জুল ইসলামকে ধরে ফেলেন ধর্ষিতারা। তারা রাস্তায় উঠার পর পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।

তিনি বলেন, থানায় নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ ধর্ষিতাদের পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি না করে থানায় আটকে রাখে এবং ধর্ষণের অভিযোগ না করতে চাপ প্রয়োগ করে। থানার জালালাবাদ থানার ওসি ও এসআই সালা উদ্দিন যুক্তি দেখান এতে মান-সম্মান নষ্ট হবে। এসআই সালা উদ্দিন তাদের জবানবন্ধী শিখিয়ে দেন এবং তা মোবাইলেও রেকর্ড করেন। এরপর ওসির যোগসাজসে সালাউদ্দিন মনগড়া এজাহার লিখে ধর্ষিতার মার স্বাক্ষর নেন।

গত ৪ নভেম্বর তাদের কোতোয়ালি থানার ভিকটিম সেন্টারে পাঠানো হয়। সেখানে দু’দিন রাখার পর ৬ নভেম্বর আদালতে তোলা হয়। তখন দুই ধর্ষিতার ২২ ধারায় দেওয়া জবানবন্ধি শুনে আদালত দ্রুত তাদের মেডিকেলে ভর্তির আদেশ দেন। ওসমানী মেডিকেলের ওসিসিতে একদিন থাকার পর আদালত দুই ধর্ষিতাকে নিজ জিম্মায় মুক্তি দেন। ঘটনার দিন ১নম্বর আসামী ফয়জুল ইসলাম গ্রেপ্তার হলেও এরপর এক মাসেরও বেশী সময়েও আর কোন আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ ব্যাপারে তাদের কোন তৎপরতাই নেই।

তিনি বলেন, ‘এসআই সালা উদ্দিনের বিতর্কিত ভূমিকার ব্যাপারে এবং মামলায় ধর্ষণের ধারা সংযুক্ত করতে আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগ দিয়েছি সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার ও ডিআইজির কাছে। বিষয়টি তদন্ত করছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ)। ২৯ নভেম্বর তিনি তাদের বক্তব্য শুনেছেন এবং ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’

তিনি জানান, এই মামলার ব্যাপারে ধর্ষিতাদের পরিবারের সদস্যরা আর্থিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত তেমনি আরও নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাদের অবস্থা এখন অত্যন্ত করুন, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এ অবস্থায় অবিলম্বে ধর্ষকদের গ্রেপ্তার এবং পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে একজন ধর্ষিতার মা, বাউল শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট সিলেটের সহসভাপতি বাউল বিলাল উদ্দিন সরকার, সদস্য ও শিল্পীদের অভিভাবক বিশাল চৌধুরী, কমর উদ্দিন, আবুল কালাম, ফয়জুল হক, মো. আব্দুল্লাহ, কণ্ঠ শিল্পী আয়শা আক্তার, জালালী রুনা, জালালী শামীমা, সুমাইয়া আক্তার মুন্নি, হৃদয় আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।