সিলেটে চলছে নিরুত্তাপ জেলা পরিষদ নির্বাচন

নির্বাচনের ভোটার কেবল জনপ্রতিনিধিরা হওয়ায় জনসাধারণের মধ্যে ভোট নিয়ে তেমন উত্তাপ নেই। এ কারণে নির্বাচনে তেমন আগ্রহ নেই কারও। সিলেটে সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। যা চলবে বেলা ২টা পর্যন্ত। জেলার (প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে) ১৩টি ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ নির্বাচনে সিলেটের ৬৪ প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবে ১৪৬৩ জন ভোটার।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে- দুপুর ১২ টার মধ্যে প্রায় ৪০% ভোট কাস্ট হয়ে গেছে। প্রতিটি কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা কম হওয়ায় যে যার সময় মতো করে এসে নিজেদের ভোট দিয়ে যাচ্ছেন।

নির্বাচন কমিশন সিলেট আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে সিলেটের ১৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৪৭ জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। পাঁচটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে আছেন আরও ১৭ জন নারী প্রার্থী। মোট ৬৪ জন প্রার্থী এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আইন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জেলার অধীনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এমন নিয়ম অনুযায়ী জেলায় মোট ১৪৬৩ জন জনপ্রতিনিধি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে এই ৬৪ জনের মধ্য থেকে মোট ১৩ জন সাধারণ সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত করবেন।

তবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এই পদে আর নির্বাচন হচ্ছে না।

এর আগে শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে সারাদেশের মত সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

এদিকে, নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় ইসি। কোনো জেলায় যাতে এমপি, মন্ত্রী বা প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তি প্রভাব খাটাতে না পারেন সেজন্য এরই মধ্যে তাদের সতর্ক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।

সিলেটের সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শুকুর মাহমুদ মিঞা জানান, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সফল করতে প্রতিটা ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় তিনজন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য, দুজন অস্ত্রধারী আনসার সদস্য ও আরও দুজন সাধারণ আনসার নিয়োজিত থাকবেন। ভোটের আগের দিন (রোববার) থেকে তারা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। এছাড়া র‍্যাবের মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্সও সার্বিক নিরাপত্তায় তাদের দায়িত্ব পালন করবে।

সিলেট জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান জানান, নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য জেলাজুড়ে ১৮জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে সর্বশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত ১৪ ভোটের দিন কেন্দ্রের প্রতি নজর রাখবেন। এছাড়া ১৬দিন আগে আরও চারজন ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা মাঠে থেকে প্রার্থীদের আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ করেছেন।

অপরদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে একাধিক নির্দেশনা দিয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে। এতে ভোটকক্ষের গোপনীয়তা রক্ষা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ভোটকক্ষে ভোটররা যাতে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে না পারেন, তা নিশ্চিতে প্রিসাইডিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর এসব জেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে জনগণের কাছে সহজে পৌঁছে দেওয়া এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আরও স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে ২০০০ সালে যে আইন প্রণীত হয়, তা বাস্তবায়ন হয় ২০১৬ সালে।

ওই বছর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক জেলা পরিষদ আইনের আওতায় প্রথমবারের মতো নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় একজন করে চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য এবং পাঁচজন সংরক্ষিত নারী সদস্যসহ মোট ২১ জনের সমন্বয়ে জেলা পরিষদ কার্যক্রম শুরু করে।