সিলেট মহানগর যুব মহিলা লীগের কমিটি বাতিলের দাবি

নবগঠিত সিলেট মহানগর যুব মহিলা লীগের কমিটিতে জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ ও দখলবাজদের নিয়ে গঠিত হয়েছে। তাই এই কমিটি বাতিল করে সৎ যোগ্য ও ত্যাগীদের নিয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন সিলেট মহানগর ২২নং ওয়ার্ড শাখা যুব মহিলা লীগের সভাপতি রুমা চৌধুরী।

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বর মহানগর যুব মহিলা লীগের তথাকথিত নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম পারভীন সংগঠন বিরোধী শ্লোগান দিলে ও ব্যানার ধরতে গেলে প্রতিবাদ করেন যুব মহিলা লীগের অন্যতম সহ সভাপতি কল্পনা বেগম। তখন মরিয়ম তার লোকজনকে নিয়ে তার উপর হামলা ও মারধর করেন। এ ব্যাপারে থানায় জিডি করা হলেও এখনো পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ ঘটনায় সিলেটের নারী সমাজের ভাবমুর্তি ভুলুন্টিত হয়েছে। এর দায় মরিয়ম পারভীনের।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ৯ নভেম্বর সিলেট মহানগর যুব মহিলা লীগের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াটাই ছিল বিতর্কিত। কারো সাথে কোন আলোচনা না করেই কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের নেতৃত্বে থাকা পাবনা গ্রুপের কিছু নেত্রীর প্রভাব খাটিয়ে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ করা হলেও তারা তড়িঘড়ি করে কয়েকটা নাম ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। শেখ হাসিনা ঘোষিত নিয়ম নীতি না মেনে অবৈধভাবে টাকার বিনিময়ে কমিটির নেতা নির্বাচন করা হয়েছে। এর সম্পূর্ণ দায় কেন্দ্রীয় নেত্রী ইসরাত জাহান নাসরিনের। তিনি মরিয়ম ও সভাপতি সুফিয়া ইকবাল খানের কাছ থেকে অবৈধ ফায়দা হাসিল করে এমন বিতর্কিতদের নিয়ে কমিটি ঘোষণা করেছেন।

তিনি বলেন, সুফিয়া ইকবাল মোটার অংকের টাকা ও দামি উপঢৌকন দিনে সভাপতি পদ কিনে নিয়েছেন। আর মরিয়ম একজন চাঁদাবাজ ও দখলবাজ মহিলা। সন্ত্রাসীদের সাথে তার উঠবস সবসময়। তিনি মধুশহীদ এলাকায় মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকের ৪টি দোকান দখল করে নিয়েছেন। এছাড়া লালদিঘীর পাড়ে প্রফেসর মনিরুল ইসলাম নামক এক ভদ্রলোকের একটি পাঁচতলা বাসাও কৌশলে দখলে নিয়েছেন মরিয়ম। দোকান কোটা দখল করে মধুশহীদে তিনি পেটুকবাড়ি রেস্টুরেন্ট করেছিলেন। পার্টনারদের কাছ থেকে এ বাবদে তিনি লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। চেক জালিয়াতি, জালাল দলিল তৈরি ইত্যাদি কাজের প্রমাণও আছে। এছাড়া তার স্বামী সাইফুল ইসলামও জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধেও অনেক মামলা রয়েছে।

সিনিয়র সহসভাপতি মুসলিমা নাজনিন সিলেটের বাসিন্দা নন। তার বাড়িও পাবনায়। সহসভাপতি আকলিমা আক্তার হেলির সাথে জামাত সংযোগ আছে। যুগ্ম সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস তৃষ্ণা শাহজালাল কলেজে লেখাপড়া করেছেন। এখন সেখানে চাকরিও করছেন। সবার জানা, সেটি জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠান। সাংগঠনিক সম্পাদক লাকি আক্তার ওয়ার্কার্স পার্টির নারীমুক্তি সংসদ সিলেট জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক। ৪নং সহসভাপতি শাবানা আক্তার উইমেন্স মেডিকেল কলেজে আয়ার কাজ করেন। ৫নং সহসভাপতি সাহেদা ডাক্তার ভূয়া ডাক্তার এবং ওয়ান্টেভুক্ত পলাতক আসামি।

মরিয়মের সাথে যোগ হয়েছে আফিয়া বেগম। তার বিরুদ্ধে সরকারি জায়গা আত্মসাতের মামলা আছে। তিনি ৭নং ওয়ার্ডের বনকলা পাড়ার বাসিন্দা। এই আফিয়াই মরিয়মের সাথে মিলে সহযোগীদের নিয়ে গত ১০ ডিসেম্বর সিলেটের বন্দরবাজার এলাকায় ‘শেখ হাসিনার কালো হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’- মিছিল দিয়েছিলেন। এর প্রতিবাদ করায় কল্পনার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

তিনি বলেন, ‘ওদের কাছে আমি প্রতারিত। আমার কাছ থেকে সুফিয়া ও মরিয়ম সম্মেলনের খরচপাতির কথা বলে বিভিন্ন দাগে দুই লক্ষ টাকা চাঁদা নিয়েছে। পরে আমি জানলাম সেই টাকা নিয়ে তারা উপঢৌকন দিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছে। এই কমিটিতে যাদের নেয়া হয়েছে তাদের অনেকেই সিলেটের ভোটার কি না এটা নিয়ে সবার প্রচন্ড সন্দেহ রয়েছে।’

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন রুমা চৌধুরী।