চট্টগ্রামের মীরসরাই ও সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ ও টেকনাফ এলাকায় সাবরাং ও জালিয়ারদ্বীপ অংশের সাগরপাড়ে বন্দর স্থাপনের লক্ষ্যে জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ করা হবে। এর ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কক্সবাজার, টেকনাফ, কুতুবদিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আশপাশের জেলাগুলোর লোকজনের মালামাল পরিবহন ও যাতায়াত খরচ কমবে এবং সময় বাঁচবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘চট্টগ্রামের মীরসরাই ও সদ্বীপ, কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ ও টেকনাফ (সাবরাং ও জালিয়ারদ্বীপ) অংশের জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৯১৩ কোটি ৭০ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই ও সন্দ্বীপ উপজেলা এবং কক্সবাজার জেলার কক্সবাজার সদর (সোনাদিয়া) এবং টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ও জালিয়ারদ্বীপ এলাকায় বন্দরের জন্য জেটিসহ আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় নির্ধারিত এলাকার সাগরপাড়ে ২৫ দশমিক ৮৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে। সেখানে ২৩ হাজার ৪৮৮ বর্গমিটার প্রশস্ত বন্দর ভবন, ৭৫ হাজার ৪৮০ দশমিক ৬০ বর্গমিটার আরসিসি দীর্ঘ জেটি, ৩ হাজার ৮৩০ বর্গমিটার বাউন্ডারিওয়াল, ৮ হাজার ৪৮৫ বর্গমিটার পার্কিং ইয়ার্ড, ৫ হাজার ৬৫ বর্গমিটার কাঠের জেটি ও অ্যাকসেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। কেনা হবে ৩০০ মিটার ব্রেক ওয়াটার এবং ১৪টি নৌ-সহায়ক যন্ত্রপাতি।
কমিশন সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রকল্পটি ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা গত মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পেয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধ্যায়-৬ এর ৬.৫.১ নং অনুচ্ছেদে নদীবন্দর আধুনিক ও উন্নত করা, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সেবার মান উন্নয়নের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া আলোচ্য প্রকল্পটি এসডিজির ৯ম লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধায় প্রকল্পটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এসডিজির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
একনেকে উপস্থাপনের আগে পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটি সম্পর্কে তাদের নিজস্ব মতামতে বলেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কক্সবাজার, টেকনাফ, কুতুবদিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আশপাশের জেলাগুলোর লোকজনের মালামাল পরিবহন ও যাতায়াত খরচ কমবে এবং সময় বাঁচবে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত বন্দর এলাকায় পরিবাহিত মালামালের সুষ্ঠু ও নিরাপদ ওঠানামা নিশ্চিতকরণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক সম্পূর্ণ সরকারি (জিওবি) অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একনেকের অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কক্সবাজার, টেকনাফ, কুতুবদিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আশপাশের জেলাগুলোর লোকজনের মালামাল পরিবহন ও যাতায়াত খরচ কমাতে এবং সময় বাঁচাতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এতে নির্ধারিত এলাকায় বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া সাবরাংয়ে নির্মিতব্য অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠার পরে বন্দরটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।