অবশেষে সাড়ে তিন হাজার হজযাত্রীর কোটা খালিই থাকছে!

ফাইল ছবি

বেশ কয়েকবার নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর পরও বাংলাদেশ থেকে সাড়ে তিন হাজারের মতো হজযাত্রীর কোটা খালি থাকছে এবার। এমন বাস্তবতার মধ্যে আগামী ২১ মে ঢাকা থেকে হজযাত্রী নিয়ে যাত্রা করবে এ বছরের প্রথম ফ্লাইট।

সচিবালয়ে বুধবার ‘ই-হজ মোবাইল অ্যাপ’ এবং ‘হজ ও ওমরাহ সহয়িকা প্রকাশনার’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ২১ মে প্রথম হজ ফ্লাইট শুরু হবে। খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর নয় দফা বাড়িয়েও হজের কোটা পূরণ করা যায়নি। সেটি সৌদি আরবকে কোটা ফেরত দেয়া হবে। কোটা ফেরত দেয়া হলেও তা আগামী হজে প্রভাব ফেলবে না।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, হজের নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হবে না। কোটা যতটুকু ফাঁকা আছে ততটুকু সৌদি আরবে ফেরত যাবে। আমরা গত বছর ২ হাজার ৪১৫ জনের কোটা সৌদি সরকারের কাছে চেয়ে নিয়েছিলাম। দুই/তিন হাজার এটা কোনো বিষয় না।

ফরিদুল হক বলেন, ‘অন্যান্য দেশ কতজন পাঠিয়েছে আর কতজন খালি থেকেছে তখন বুঝতে পারবেন। আমাদের যত হজযাত্রী যাচ্ছে পার্সেন্টেজ অনুসারে সারা বিশ্বে আমরা সর্বোচ্চ থাকব, এটা নিশ্চিত থাকেন ইনশাল্লাহ।’

হজের খরচ কমানোর কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই জানিয়ে ফরিদুল হক খান বলেন, ‘আগামী বছর একটু দূরে বাসা ভাড়া নিয়ে খরচ কমানো যায় কি না, সে বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা করা করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উন্নত হজ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। হজের প্রাক-নিবন্ধন, নিবন্ধন, হজযাত্রীদের টিকা ও চিকিৎসা সেবাদান, আবাসন ব্যবস্থার তথ্যাদি, লাগেজ ব্যবস্থাপনা, হারানো হজযাত্রী খুঁজে পাওয়াসহ যাবতীয় সেবা কার্যক্রমে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। হজ এজেন্সিগুলো প্রযুক্তিগত সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করেছে।’

হজযাত্রীদের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করাই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সে লক্ষ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে হজযাত্রী এবং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত অংশীজনদের জন্য হজ পালনসহ ধর্মীয় অন্যান্য বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে ই-হজ মোবাইল অ্যাপ এবং হজ ও ওমরাহ সহায়িকা প্রকাশ করা হয়েছে। এটি স্মার্ট হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি চমৎকার উদ্যোগ।’

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী জানান, ই-হজ মোবাইল অ্যাপটি পরীক্ষামূলকভাবে উদ্বোধন করা হলো। প্রাথমিকভাবে প্রাক-নিবন্ধন ও প্রাক-নিবন্ধন রিফান্ড আবেদন এই সিস্টেমের মাধ্যমে করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন তথ্য এখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। ফলে হজযাত্রীরা এই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসেই ভাউচার তৈরি করতে পারবেন।

মোবাইল অ্যাপটিতে ধাপে ধাপে নতুন সেবা যুক্ত করা হবে জানিয়ে ফরিদুল হক খান বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে চুক্তির আওতায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিজনেস অটোমেশন লিমিটেড এই অ্যাপটি তৈরি করেছে।’

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘এবার হজে বেসরকারি কোটা ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার নিবন্ধিত হয়েছেন। কিছু খালি মনে হলেও আসলে সেখানে খালি নেই। এখন আমাদের গাইড আছে, মোনাজ্জেম আছে। সেগুলো ধরলে বেসরকারি ক্ষেত্রে হজের কোটা পূরণ হয়ে গেছে। সরকারি ক্ষেত্রেও গাইডসহ আরও কিছু যুক্ত হবে। আমার কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীর অনেক দেশ এবার হজযাত্রীর কোটা ফেরত দেবে। পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়া কোটা ফেরত দেবে। আরও অনেক দেশ ফেরত দেবে। এ জন্য আগামীতে কোটা পেতে আমাদের কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করি না।’

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে।

সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন ও অবশিষ্ট ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি হজের নিবন্ধন শুরু হয়। এরপর আট দফা বাড়ানো হয় নিবন্ধনের সময় এর মধ্যে কোটা পূরণ হয়নি। শেষে নবম দফায় মঙ্গলবার নিবন্ধনের বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়।