যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানের অতিরিক্ত চাপে ঢাকা শহরে গণপরিবহনের গতি খুবই ধীর। যানজটে নষ্ট হয় কর্মঘন্টা, অপচয় হয় জ্বালানি। তাই ঢাকা শহরে অনেকে অফিস-আদালত, স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন জায়গায় স্বল্প দূরত্বে সাইকেলে যাতায়াত করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আবার এ শহরে এই সাইকেলই শিশু কিশোরদের জন্য বিনোদনের খোরাক জোগাতে পারে।
তাই চাহিদার কথা মাথায় রেখে ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি সড়কে অন্যান্য যানবাহনের পাশাপাশি সাইকেলের জন্য আলাদা সারি করার চিন্তা করছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
সিটি করপোরেশন কর্মকর্তারা বলেছেন, পৃথিবীর অনেক দেশে সাইকেল কেন্দ্রিক যাতায়াত ব্যবস্থা থাকলেও রাজধানীতে সড়ক যোগাযোগ পরিকল্পনায় সাইকেল লেন রাখা হয়নি। আর ঢাকার বর্তমান যে সড়কগুলো আছে তা কম প্রশস্তের হওয়ায় সেখানে সাইকেল লেন করার সুযোগ নেই। নতুন নির্মিত সড়কগুলোর উন্নয়ন পরিকল্পনায় সাইকেল লেনকে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে ।
ইতোমধ্যে, নগর কর্তৃপক্ষ শহরের বেশ কয়েকটি সড়কের পরিকল্পনায় সাইকেল লেনের একটি নেটওয়ার্ক রাখা হচ্ছে। যাতে যাতায়াতের পাশাপাশি রাজধানীবাসীর বিনোদনের ও ব্যবস্থা হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশের শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে সাইকেলকে কেন্দ্র করে। ডেনমার্ক ও সুইজারল্যান্ডে আমরা দেখি সাইকেলের জন্য আলাদা লেন আছে। তাই আমরা ইন্টিগ্রেটেড করিডর ম্যানেজমেন্টের নামে একটি পরিকল্পনার আওতায় আমাদের বিমানবন্দরের হাজি ক্যাম্পের পেছন থেকে কুড়িল পর্যন্ত পুরো সড়কে আমরা একটি সাইকেল নেটওয়ার্ক তৈরি করে দেবো। যাতে মানুষ সাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারে। আমরা যত বেশি সাইকেল লেন করতে পারবো ততবেশি কার্বন নিঃসরণ কমাতে পারবো।
তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির আওতায় যেসব খালের উন্নয়ন কার্যক্রম হবে সব জায়গায়ই সাইকেল ও হাটার রাস্তার নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে। এতে নাগরিকদের বিনোদনের ব্যবস্থাও হবে।
উত্তর সিটি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ইন্টিগ্রেটেড করিডর ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের আওতায় উত্তর সিটির বিভিন্ন যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ করবে। বর্তমানে প্রকল্পের জন্য পরামর্শক নিয়োগের কাজ চলছে।
অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় কালুনগর, জিরানী, মান্ডা ও শ্যামপুর খাল দখল ও দূষণমুক্ত করার পরে পাড়ে মোট ২০ কিলোমিটার এলাকার সাইকেল লেন ও হাঁটার রাস্তা তৈরি করবে।
এ প্রকল্পের প্রণেতা ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের বলেন, আমরা চারটি খাল উন্নয়ন করবো। সেখানে আমরা সাইকেল লেন ও হাটার রাস্তা রেখেছি । এ এলাকায় অনেক জায়গা আছে সরু প্রকৃতির সেখানে আলাদা হাটার রাস্তা ও সাইকেল লেন রাখা সম্ভব হবে না। সেখানে সাইকেল চলাচল ও হাটার কাজ দুটোই একসাথে করতে পারবে।
আর দক্ষিণ সিটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল) বোরহান উদ্দিন বলেন, আমরা আমাদের ৫৩ ইন্টারসেকশন ট্রাফিক লাইট কার্যকর করার জন্য প্রকল্প নিয়েছি। এ ইন্টারসেকশনগুলোতে সাইকেল লেনের জন্য আলাদা জায়গা বের করা যায় কিনা সেজন্য আমরা আমাদের পরামর্শককে নির্দেশনা দিয়েছি।
এ বিষয়ে ইনিস্টিটিউট ফর প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সাইকেল লেন দীর্ঘদিনের দাবি। পুরো শহরে এটা করার মতো বাস্তবতা নাই। এবারের যে উদ্যোগ সেটা যদি বড় জায়গা জুড়ে করা যায় তাহলে সফলতা পাওয়া যাবে। আগে আগারগাঁও ও মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় সাইকেল চালু করেছিলাম কিন্তু এর নেটওয়ার্ক না থাকায় কার্যকর হয়নি। সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতায় এটা করা উচিৎ কারণ সমন্বিত পরিকল্পনায় সাইকেল লেন রয়েছে।
নতুন সড়কের পাশাপাশি পুরনো সড়কগুলোতে সাইকেল করা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কম প্রশস্তের রাস্তাগুলোতে বড় গাড়ি প্রবেশাধিকার কড়াকড়ি আরোপ করে সাইকেলের রাস্তা হিসেবে চালু করা যায়। তাছাড়া একটি নির্দিষ্ট সময়ে সড়কে বড় গাড়ি প্রবেশাধিকার কড়াকড়ি করেও সাইকেলের জন্য খোলা রাখা যায়। প্যারিসে কয়েকটি স্কুল জোনে প্রাইভেট কার ঢুকতে দেয় না, সাইকেল চলে। পুরনো ঢাকার অতি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এটা করা যেতে পারে।