সাইকেলের মালিকের কাছ থেকে অনুমতি না নিয়ে সাইকেল নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক আদিবাসী ছাত্র জুয়েল চাকমাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ছাত্রের নাম মোহাম্মদ তারেক রহমান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা খলিলুর রহমানের অনুসারী।
‘মূলত সাইকেল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় দেখে ফেলায়’ তাকে মারধর করা হয়েছে বলে মনে করছেন জুয়েল। এ ঘটনায় নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে করে হলের প্রভোস্ট বরাবর একটি অভিযোগ পত্রও দিয়েছেন ভুক্তভোগী জুয়েল চাকমা। অভিযোগ পত্রের এক কপি সিলেট ভয়েসের কাছেও এসেছে। তবে এ ঘটনার দুই দিন পার হয়ে গেলেও এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কর্তৃপক্ষকে।
সাইকেলের মালিক ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জুয়েল চাকমা জানায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কাউকে না জানিয়ে জুয়েলের রুমের সামনে থেকে সাইকেল নিয়ে যায় তারেক। ঘটনাটি টের পেয়ে রুম থেকে বাইরে আসেন জুয়েল। এরপর তারেককে ধরার উদ্দেশ্যে দৌড় দিলে তার নাগাল পায় নি জুয়েল। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরীর মাধ্যমে প্রধান ফটকের সামনে তারেককে আটক করা হয়। এসময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হল থেকে সাইকেল নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তারেক জানায়, ‘আমার বন্ধু খালেদ বলেছে ঐখানে দুটি সাইকেল আছে। একটি নিয়ে আয়’। এজন্য আমি নিয়ে আসছি।’ এসময় জুয়েলকে অদৃশ্য শক্তির ভয় দেখিয়ে হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
জুয়েল চাকমা আরো বলেন, ‘তারেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে জানতে পেরে আমি তাকে আর কিছু বলিনি। পরে তাকে সাইকেল দিয়ে আসি যাতে তার কাজটি শেষ করতে পারে। এরপর রাত ৯টার দিকে সে রুমের সামনে সাইকেল রেখে যায়।’
এদিকে এ ঘটনার জের ধরে পরবর্তীতে ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে জুয়েলকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তারেকের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আনুমানিক রাত সাড়ে নয়টার দিকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সজিব সহ আরো অজ্ঞাত ৫/৬ জন জুয়েলের রুমে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এসময় জুয়েল ভয় পেয়ে পাশের রুমে এক বড় ভাইয়ের কাছে চলে যায়। এরপর পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আতাহার, সিয়াম ও সাইকেল নিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থী তারেক রহমানসহ আরো প্রায় ২০/২৫ জন জুয়েলের রুমের দরজা ভাঙার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে জুয়েলকে টেনেহিচড়ে রুম থেকে বের করে নিয়ে মারধর করে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা ও সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. খলিলুর রহমানের অনুসারী বলে জানা গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি অস্বীকার করে তারেক রহমান বলেন, “আমি ভুল করে বন্ধুর সাইকেল মনে করে তার সাইকেল নিয়ে গেছি। প্রধান ফটকের সামনে তার সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়। পরে বিষয়টি আমি বড় ভাইদেরকে বললে তারা তাকে জিজ্ঞেস করার জন্য তার রুমের সামনে যায়। এসময় সে দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর আমাদের সাথে সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, “সাইকেল নিয়ে দুই জনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হইছে, বর্তমানে এটা মিমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। “
সার্বিক বিষয়ে হলের প্রভোষ্ট মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম বলেন, “এখানে সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে নি। তাদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি হইছে। তবে আজকে বিকালে জুয়েল অভিযুক্ত সকলকে ক্ষমা করে দিয়েছে।”