সিলেটের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম চালিকাশক্তি সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেট’র ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল আজ মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর)। দিনটিতে নিয়মিত আনন্দ আয়োজন ও নাট্যোৎসব বাতিল করে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বাহক সারদা স্মৃতি ভবন (সারদা হল) সংস্কৃতিচর্চার জন্য খুলে দেওয়ার দাবিতে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেছে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেট।
সারদা স্মৃতি ভবনের সম্মুখে মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয় গান, কবিতা, নৃত্য ও নাটক পরিবেশন। এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বক্তারা সারদা স্মৃতি ভবনকে জঞ্জালমুক্ত করে এবং সকল অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে সারদা হলকে সংস্কৃতিচর্চার জন্য অবিলম্বে খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
তারা বলেন, সারদা হল সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীদের সংস্কৃতিচর্চার স্থান। দীর্ঘদিন যাবৎ নানা অজুহাতে এই হলটিতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের তাদের ব্যবহারিক যন্ত্রপাতি, বিভিন্ন প্রকার গাড়ি ও অস্থায়ী পাঠাগার রেখে হলটিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বারবার দাবি জানানোর পরেও সংস্কৃতিচর্চার জন্য এই হলটি সংস্কার করা হয়নি এবং সংস্কৃতিচর্চা বন্ধ রাখা হয়।
বক্তারা বলেন, সিলেটের ঐতিহ্যের ধারক সারদা স্মৃতি ভবন সংস্কৃতিচর্চার জন্য খুলে দিয়ে এর সংস্কারের মধ্য দিয়ে পুণরায় হলটি চালু না হলে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থেকে সংস্কৃতিকর্মীদের অভিযোগ শোনেন। তিনি সাংস্কৃতিক সমাবেশের শেষ পর্যায়ে তার বক্তব্যে বলেন, সারদা হল রক্ষার আন্দোলন অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত। আমরা এই ঐতিহ্য রক্ষা করব এবং এখানকার সংস্কৃতিচর্চার উন্নয়নে সিটি কর্পোরেশন আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে সংস্কৃতিকর্মীদের দাবি পূরণ করে সারদা স্মৃতি ভবন সংস্কৃতিচর্চার জন্য খুলে দেবে।
তিনি বলেন, কোনো ঐতিহ্য-স্থাপনা ধ্বংস বা মুছে ফেলা কারোরই কাম্য নয়। সারদা স্মৃতি ভবন থেকে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে এটি চালু করা হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।
এসময় পীর হবিবুর রহমান পাঠাগার পাঠাগার স্ব স্থানে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানালে মেয়র সারদা স্মৃতি ভবন ও পীর হবিবুর রহমান পাঠাগার নভেম্বরের মধ্যে চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমেদ মিশু। সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্তের পরিচালনায় সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন, প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল-আজাদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরামুল কবির, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর তৌফিক বক্স লিপন, রকিবুল ইসলাম ঝলক, সৈয়দ তৌফিকুল হাদি, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোকাদ্দেছ বাবুল, সাংস্কৃতিক সংগঠক শামসুল বাছিত শেরো, নিরঞ্জন দে যাদু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সদস্য সামছুল আলম সেলিম, সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, সিলেট বিভাগের সাধারণ সম্পাদক নিলাঞ্জনা যুঁই, পরিবেশ আন্দোলনের নেতা আব্দুল করিম কিম, সিলেট ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি ফরিদ আহমদ ও ইমজা, সিলেট’র সভাপতি মইনুদ্দিন মঞ্জু।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুনির্মল কুমার দেব মীন, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের প্রধান পরিচালক অরিন্দম দত্ত চন্দন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কবি এ কে শেরাম, বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রানা কুমার সিন্হা, উদীচী সিলেট’র সভাপতি এনায়েত হাসান মানিক, নাট্য পরিষদের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মনির হেলাল, বিভাষ শ্যাম যাদন, প্রিন্স সদরুজ্জামান, নিলাঞ্জন দাস টুকু, সাংস্কৃতিক সংগঠক খোয়াজ রহিম সবুজ, উজ্জ্বল দাস, সঙ্গীতশিল্পী অনিমেষ বিজয় চৌধুরী, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ আশরাফুল আলম নাসির, ইনোভেটর’র সমন্বয়ক প্রভাষক প্রণব কান্তি দেব, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য তনু দীপ, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী সাইমুম আনজুম ইভান, নাট্য পরিষদের কার্যকরী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় দেব শান্ত, নির্বাহী সদস্য ফারজানা সুমি, দিবাকর সরকার শেখর প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সাংস্কৃতিক সমাবেশে অনুষ্ঠান পরিবেশন করে উদীচী সিলেট, থিয়েটার বাংলা, থিয়েটার মুরারীচাঁদ, নৃত্যশৈলী ও সঙ্গীতশিল্পী পল্লবী দাস মৌ।