সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামোর নানা স্তরে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে; মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি তখন ধর্মের নামে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিকর্মীরা।
প্রশাসনিক ও সামাজিক কাঠামোর অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসররা যেকোনো সময় ছোবল মারতে পারে বলে সরকারকে সতর্কও করেছেন তারা।
সংস্কৃতিকর্মীরা বলেন, রাজনৈতিক সংশ্লেষ ছেড়ে তারা সমাজে ঘটে যাওয়া যেকোনো অন্যায়-অবিচার ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জারি রাখবেন কথা, কবিতা, গানে ও নাটকে।
শুক্রবার (১২ মে) সকাল ৯ টায় শারদা হল ভবন প্রাঙ্গণে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধনী পর্বে তারা এসব কথা বলেন।
‘সংস্কৃতির শক্তিতে জেগে উঠো বাংলাদেশ’ শিরোনামে এবার দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার সম্মেলন উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সদর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী।
সাংস্কৃতিক সংগঠক আবৃত্তিশিল্পী সুকান্ত গুপ্ত’র সঞ্চালনায় উদ্বোধনী পর্বে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য, নাট্যজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুনির্মল কুমার দেব মীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাজনীন হোসেন, বরেণ্য সাংবাদিক এবং সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের উপদেষ্টা আল আজাদ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য মোকাদ্দেস বাবুল, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের প্রধান পরিচালক অরিন্দম দত্ত চন্দন, সদস্য সচিবের বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গৌতম চক্রবর্তী।
সভাপতির বক্তব্যে রাখেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি শামসুল আলম সেলিম।
শুরুতে প্রতীক এন্দ এবং অনিমেষ বিজয় চৌধুরী রাজুর পরিচালনায় জাতীয় সংগীতের সাথে জাতীয় পতাকা এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধক এবং অতিথিবৃন্দ।
আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যখন ঠুলি পড়ে থাকে ধর্মান্ধতার, তখন সেই ঠুলি সরানোর দায়িত্ব সংস্কৃতিকর্মীদের। আমরা বিশ্বাস করি এ দেশের সংস্কৃতিকর্মীরা সবচেয়ে তেজোদ্দীপ্ত, প্রাণবন্ত ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ। কথা-কবিতা, গান, আবৃত্তি ও নাটকে তাদের যে প্রতিবাদ তা কখনো বৃথা যেতে পারে না। তাদের কণ্ঠে যে বিদ্রোহের গান, তা কোনোদিন ব্যর্থ হবে না। আজকে মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন, সংগ্রাম তাতে সংস্কৃতিকর্মীরা কখনো স্তব্ধ হয় না। সমাজে যত গ্লানি, অন্যায়, আমলাতন্ত্র সমাজের ঘাড়ে বসে আছে, তার প্রতিবাদে সংস্কৃতিকর্মীদের কণ্ঠ যেন সারা বাংলাদেশ যেন শুনতে পায়।’
দিনব্যাপী দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় সাংগঠনিক অধিবেশন। এতে সকল সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহন করেন। মধ্যাহ্ন বিরতির পর অনুষ্ঠিত হয় কাউন্সিল অধিবেশন। এতে কাউন্সিলরবৃন্দের মনোনয়নে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়।
সদস্যরা হলেন- সভাপতি হিসেবে শামসুল আলম সেলিম, সহ সভাপতি মোকাদ্দেস বাবুল, সহ সভাপতি বিভাষ শ্যাম পুরকায়স্থ যাদন, সহ সভাপতি শামসুল বাছিত শেরো, সহ সভাপতি বিপ্রদাশ ভট্টাচার্য, সহ সভাপতি সুরাইয়া জামান, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন গৌতম চক্রবর্তী, সহ সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ বিজয় চৌধুরী রাজু, সুকান্ত গুপ্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক নীলাঞ্জনা দাস জুঁই, দপ্তর সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম অনি, প্রচার সম্পাদক খোকন ফকির, প্রকাশনা সম্পাদক নাজমা পারভীন, পাঠাগার সম্পাদক মুক্তা পাল চৌধুরী, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পরাগ রেনু দেব, অর্থ সম্পাদক বিপ্লব শ্যাম পুরকায়স্থ, নির্বাহী সদস্য হিসেবে বিধূভুষন ভট্টাচার্য, রানা কুমার সিনহা, প্রতীক এন্দ, রজত কান্তি গুপ্ত ও অপূর্ব শর্মা।
উপদেষ্টা মন্ডলী মনোনীত হন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সদর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা বেদানন্দ ভট্টাচার্য, প্রবীন কন্ঠ শিল্পী হিমাংশু বিশ্বাস, সংগীত শিল্পী জামাল উদ্দিন হাসান বান্না, নাজনীন হোসেন এবং বরেণ্য সাংবাদিক আল আজাদ।
পরে নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে দ্বিবার্ষিক সম্মেলন সমাপ্ত হয়।