সমাবেশ থেকে আন্দোলনের ১০ দফা জানাবে বিএনপি

নানা ঘাত-প্রতিঘাতের পর অবশেষে আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা বিভাগের গণসমাবেশ। রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বেলা ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই সমাবেশ শুরু হবে। এই গণসমাবেশকে স্মরণকালের ঐতিহাসিক সমাবেশে রূপ দেওয়ার সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি সমাবেশের মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকছে আগামী দিনের ‘গণআন্দোলনের ১০ দফা’। সেইসঙ্গে সমাবেশ থেকে আসবে আনুষ্ঠানিকভাবে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা এবং নতুন কয়েকটি কর্মসূচিও।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৯টি বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিলেও বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে গ্রেফতার হওয়ায় ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে থাকছেন না তিনি।

শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠেয় এ সমাবেশের আগে মির্জা ফখরুল মুক্তি না পেলে দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। পাশাপাশি সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান সভাপতিত্ব করবেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে শনিবারের সমাবেশ সম্পর্কে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে চালিত করতে ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশের মাহাত্ম্য অনেক। আমরা সবসময় সংঘাতহীন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মত প্রকাশের পক্ষে। ৯টি বিভাগীয় গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণ আয়োজন করেছি। কিন্তু ঢাকার সমাবেশ সরকার বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। আমাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল, স্থায়ী কমিটির নেতা মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার করেছে।’

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উল্লেখ করেন, শনিবারের সমাবেশ থেকে জাতির উদ্দেশে তাদের হারানো অধিকার ফেরানোর বার্তা দেওয়া হবে। নতুন কর্মসূচি আসবে। এই সরকার পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে নষ্ট করেছে, ধ্বংস করেছে। আমরা আমাদের দাবি তুলে ধরবো জাতির সামনে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, শনিবারের সমাবেশ থেকে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি জানাবে বিএনপি। এই দাবিগুলো সমাবেশে উপস্থাপন করবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। পাশাপাশি তিনি আগামী দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেবেন।

দলের বিভিন্ন পর্যায় ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, ১০ দফা দাবি নিয়ে ইতোমধ্যে বিএনপির সঙ্গে অপরাপর বিরোধী দলগুলোর আলোচনা হয়েছে। বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই এই ১০ দফা দাবি ঠিক করা হয়েছে। নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আভাস পাওয়া গেছে যে, ১০ দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রণয়ন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের মূল্য কমানো, অর্থপাচা রোধে কমিশন গঠন, গুম-খুনের শিকারদের বিচার, সাম্প্রদায়িক অপরাধগুলোর বিচার নিশ্চিত ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও বাহিনীগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি।

এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমরা সকালেই সমাবেশে যাবো। আমরা সমাবেশে জানাবো যে দেশ এভাবে চলতে পারে না। আমাদের কর্মসূচির তালিকায় হরতাল নেই। তবে বছরজুড়ে টানা কর্মসূচি আসবে। দেশ এভাবে চলতে পারে না, একটা প্রসেসে আনতে হবে।’

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, শনিবারের সমাবেশে স্থায়ী কমিটির প্রায় সব সদস্যই যাবেন। ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ হওয়ায় প্রত্যেক সদস্য বক্তব্য না দিলেও মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের স্থলাভিষিক্ত হবেন দুই জন সদস্য। এক্ষেত্রে জমিরউদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী উল্লেখযোগ্য।

দলের সিনিয়র নেতারা, এদের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন ফখরুল ও আব্বাস, ফাইল ফটোদলের সিনিয়র নেতারা, এদের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন ফখরুল ও আব্বাস, ফাইল ফটো

এদিকে দলের প্রভাবশালী নেতারা জানান, ইতোমধ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিএনপি হাইকমান্ড। সামনে সুযোগ মতো এই ঘোষণা দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই সংস্কারের মধ্যে ‘বিতর্কিত’ সংশোধনী বাতিলে সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন বাতিল, জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন, প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন, সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচারে মিডিয়া কমিশন গঠন, সংবিধান মোতাবেক ন্যায়পাল নিয়োগ, অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠন উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া, ২০১৭ সালের ১০ মে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঘোষিত ‘ভিশন ২০৩০’-কে কেন্দ্রে রেখে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় সমঝোতা কমিশন গঠন করা। জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি সংবিধান সংশোধন করে গণভোটের ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন, সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বন্ধ করা, বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি সন্ত্রাসবাদের চর্চা বন্ধ করা, বিদ্যুতে আমদানি-নির্ভরতা কমিয়ে আনার বিষয়গুলোও রূপরেখায় স্থান পেয়েছে। এই রূপরেখাকে নির্বাচনি ইশতেহার হিসেবে দেখছে বিএনপি।

স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘রূপরেখার ঘোষণা দলের পক্ষ থেকে পরে জানানো হবে।’