মেয়র হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট উপস্থাপন করলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর দক্ষিণ সুরমার একটি কনভেনশন সেন্টারে ৯২৫ কোটি ৪ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকার এ বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
প্রস্তাবিত বাজেটে বরাবরের মতই আয় ও ব্যয় সমপরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে।
বাজটে আয়ের খাত :
ঘোষিত বাজেটে উল্লেখযোগ্য আয়ের খাত গুলো হচ্ছে- হোল্ডিং ট্যাক্স ৪৮ কোটি ৩৫ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা, স্থাবর সম্পত্তি হস্থান্তরের উপর কর ২৫ কোটি টাকা, ইমারত নির্মাণ ও পুনঃ নির্মাণের উপর কর ২ দুই কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, ট্রেড লাইসেন্স ১০ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা, বিজ্ঞাপনের উপর কর ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, বিভিন্ন মার্কেটের দোকান গ্রহীতার নাম পরিবর্তনের ফি ও নবায়ন ফিস বাবদ ৮০ লক্ষ টাকা, ঠিকাদারী তালিকাভুক্তি ও নবায়ন ফিস বাবদ ৩০ লক্ষ টাকা, ল্যাব টেষ্ট ফিস বাবদ ৬০ লক্ষ টাকা, বাস টার্মিনাল ইজারা বাবদ আয় ২ কোটি টাকা, ট্রাক টার্মিনাল ইজারা বাবদ আয় ৫০ লক্ষ টাকা, খেয়াঘাট ইজারা বাবদ ২০ লক্ষ টাকা, সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি ও দোকান ভাড়া বাবদ ৫ কোটি টাকা, রোড রোলার ভাড়া বাবদ আয় ৫০ লক্ষ টাকা, রাস্তা কাটার ক্ষতিপূরণ বাবদ আয় ৩০ লক্ষ টাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে আয় ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, দক্ষিণ সুরমায় জননেত্রী শেখ হাসিনা শিশু পার্কের টিকিট বিক্রয় থেকে আয় ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকাসহ রাজস্ব হিসাব উপাংশ ১ এ মোট ১০৫ কোটি ১২ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা এবং পানির সংযোগ লাইনের মাসিক চার্জ বাবদ ৭ কোটি টাকা, পানির লাইনের সংযোগ ও পুনঃসংযোগ ফিস বাবদ ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা, নলকুপ স্থাপনের অনুমোদন ও নবায়ন ফি বাবদ ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকাসহ রাজস্ব হিসাব উপাংশ ২ এ মোট ১৮ কোটি ২৭ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা। সম্মানীত নগরবাসী নিয়মিত হোল্ডিং ট্যাক্সসহ অন্যান্য বকেয়া পাওনা পরিশোধ করলে বাজেট বছরে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব খাতে সর্বমোট ১২৩ কোটি ৪০ লক্ষ ১১ হাজার টাকা আয় হবে বলে আশা করছি। বাজেটে সিলেট সিটি কর্পোরেশন, নন-ডিপিপি এবং ডিপিপি সরকারি অর্থায়নে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন খাতে প্রাপ্তি ৫২৬ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা এবং নিজস্ব মার্কেট নির্মাণ খাতে ৩৭ কোটি টাকা আয় ধরা হয়েছে।
বাজেটে ব্যয়ের খাত :
এবারের বাজেটে রাজস্ব খাতে সর্বমোট ১১২ কোটি ৩৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে। তন্মধ্যে সাধারণ সংস্থাপন খাতে ৫২ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা, শিক্ষা খাতে ব্যয় ৪ কোটি ১০ লক্ষ টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ১ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা, পরিচ্ছন্নতা খাতে ব্যয় ১৯ কোটি ৬০ টাকা, বিদ্যুত প্রকৌশল/সড়ক বাতি খাতে ব্যয় ৩ কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সমাজকল্যান ও বস্তি উন্নয়ন খাতে ব্যয় ৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা, বিবিধ ৭ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা, এর মধ্যে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ খাতে ৫০ লক্ষ টাকা, বৃক্ষ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৪৫ লক্ষ টাকা, মোকদ্দমা ফি ও পরিচালনা ব্যয় বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা, জাতীয় দিবস উদযাপন খাতে ৯০ লক্ষ টাকা, নাগরিক সম্বর্ধনা ও আপ্যায়ন ব্যয় বাবদ ৮০ লক্ষ টাকা, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি ব্যয় খাতে ১৫ লক্ষ টাকা, মেয়র কাপ ক্রিকেট, ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন টুর্ণামেন্ট ব্যয় বরাদ্দ ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা, রিলিফ/জরুরী ত্রাণ ব্যয় বরাদ্দ ২ কোটি টাকা, আকষ্মিক দূর্যোগ/বিপর্যয়/করোনা ব্যয় বরাদ্দ ২ কোটি টাকা, কার্যালয়/ভবন ভাড়া বাবদ বরাদ্দ ১ কোটি টাকা, নিরাপত্তা/সিকিউরিটি পুলিশিং ব্যয় খাতে ৯০ লক্ষ টাকা, ডিজিটাল মেলা আয়োজনে ব্যয় বরাদ্দ ২০ লক্ষ টাকা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পানি সরবরাহ শাখার সংস্থাপন ব্যয় সহ পানির লাইনের সংযোগ ব্যয়, পাম্প হাউজ, মেশিন, পাইপ লাইন মেরামত সংস্কার ও বিদ্যুত বিল পরিশোধসহ মোট ১৮ কোটি ০১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ।
বাজেটে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে রাজস্ব খাতে ব্যয় বাবদ মোট ৩৩ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে । তন্মধ্যে রাস্তা নির্মাণ, রাস্তা মেরামত/সংস্কার, ব্রীজ/কালভার্ড নির্মাণ, ব্রীজ/কালভার্ড মেরামত/ সংস্কার, ড্রেইন নির্মাণ/মেরামত, সরঞ্জাম যন্ত্রপাতি ও সম্পদ ক্রয়, সিটি কর্পোরেশনের ভবন নির্মাণ/মেরামত, সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ষ্টাফ কোয়াটার নির্মাণ ও সংস্কার, ঢাকায় সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব লিয়াঁজো অফিসের জন্য ফ্ল্যাট ক্রয়, কসাই খানা নির্মাণ/ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গা উন্নয়ন, সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন রক্ষায় গ্যারেজ নির্মাণ, সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন রক্ষণা-বেক্ষনে ওয়ার্কসপ নির্মাণ, হাট বাজার উন্নয়ন, বাস টার্মিনাল সংস্কার ও উন্নয়ন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পাঠাগার নির্মাণ, নাগরিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন, গভীর নলকুপ স্থাপন, এমজিএসপি প্রকল্পের রক্ষনা-বেক্ষন কাজের নিজস্ব অর্থ ব্যয়, সিটি কর্পোরেশনের জন্য জীপ গাড়ী ও ২টি আধুনিক এ্যাম্বুলেন্স ক্রয় এবং নারীদের উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ ব্যয়সহ ইত্যাদি ব্যয় উল্লেখযোগ্য।
বাজেট উপস্থাপনের অনুষ্ঠানে মেয়র আরিফুল হক বিগত দুই মেয়াদে মেয়র থাকাকালীন সিলেট সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য নগরবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। এছাড়াও বেশকিছু প্রকল্পের অনুমোদন না মেলায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
মেয়র বলেন – মহানগরের শাহজালাল মাজার সড়ক ও আম্বরখানা থেকে জিন্দাবাজার-বন্দর হয়ে সার্কিট হাউস পর্যন্ত মাটির নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনের পর আরও ১১টি সড়কে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতায়নের প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলো সিসিক। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়- শেষ পর্যন্ত সিলেটের সাথে চরম বৈষম্যমূলক নীতি দেখানো হয়েছে। অন্যান্য অঞ্চলের জন্য এই প্রজেক্ট অনুমোদন দিলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সিলেটের প্রজেক্ট বাদ দিয়েছেন। এতে সিলেটবাসী বঞ্চিত হয়েছেন।
মেয়র হতাশা ব্যক্ত করে আরও বলেন- সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নে ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ৪ হাজার ১ শ ৮৯ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প ডিপিপি প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হলেও এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি নেই। বর্ধিত এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জরুরি প্রয়োজন থাকলেও এ বিষয়ে সরকারের নির্লিপ্ততা নতুন ওয়ার্ডগুলোর বাসিন্দাকে চরমভাবে হতাশ করবে।
বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত করেন সিসিক মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি মাওলানা জসিম উদ্দিন। গীতা পাঠ করেন সিসিক কর্মকর্তা জ্যুতিষ চক্রবর্তী ও বাইবেল পাঠ করেন ফিলিপ সমাদ্দর।