প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুরজাহান বেগমের (২৬) একের পর এক ‘বিয়ে ও বিচ্ছেদকাণ্ডে’ তোলপাড় শুরু হয়েছে। সুরজাহান বেগম সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার পুরান-বাঁশতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বছর ঘুরে স্বামী বদলানো এবং শুধুমাত্র বিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করা তার পছন্দ। প্রথম বিবাহের পর এ যাবৎ যতগুলো বিয়ে করেছেন তাদের সবাই বিবাহিত পুরুষ। এলাকায় একাধিক বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে বিয়ে এবং এ কারণে অনেক পরিবার ভেঙে তছনছ হওয়ার ঘটনায় এলাকাজুড়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। একজন শিক্ষিকার এমন কাণ্ড ঘৃণার চোখে দেখছেন সমাজ সচেতনরাও। এ যাবৎ কাগজে-কলমে ৩টি বিয়ে করলেও স্থানীয়রা বলছেন, ৪/৫টি বিয়ে করেছেন ওই শিক্ষিকা।
স্থানীয়রা জানান, সুরজাহান বেগম ২০১২ সালে হকনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়ার পর ওই সালেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের টিলাগাঁও (মুলতানপুর) গ্রামের মফিজ আলীর পুত্র (দর্জি) গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে। ওই সংসারে তার এক পুত্রসন্তানও (বয়স ৭) রয়েছে।
প্রথম পক্ষে এক পুত্রসন্তান জন্ম দেওয়ার পর প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দেন ওই শিক্ষিকা। বদলি হয়ে চলে আসেন নিজ এলাকা উপজেলার বোগলাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি এলাকায় বেপরোয়া চলাচল শুরু করেন। স্থানীয় প্রভাবশালী, সীমান্ত এলাকার বখাটে লোকজন এবং জনপ্রতিনিধিদের নজরে আসেন ওই শিক্ষিকা। অনেককে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন তিনি। পিতার বাড়িতে থেকে দীর্ঘদিন একের পর এক প্রেম প্রেম খেলায় মেতে ওঠেন তিনি।
বোগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির সুবাদে প্রেমে জড়ান একই স্কুলের নৈশপ্রহরী ৪ সন্তানের জনক বুলবুল মিয়ার সাথে। বুলবুল প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করে বছরখানেক সংসার করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, বুলবুলের সংসারে থাকাকালীন সুরজাহান গোপনে প্রেমের খেলায় জড়িয়ে পড়েন স্থানীয় বোগলাবাজারের ফার্মেসি ব্যবসায়ী ইকবাল নামক এক বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে। বুলবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি নেয়ার জন্য চাপ দেন ওই শিক্ষিকা। কিছুদিন পর স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন বুলবুল মিয়া। আয়-রোজগারের আশায় সৌদি আরব পাড়ি জমান তিনি। বিদেশে পাড়ি জমানোর দুই-তিন মাসের মাথায় বুলবুল বিদেশে থাকাবস্থায় কোর্টের মাধ্যমে তাকে তালাক দেন সুরজাহান। বুলবুলকে তালাক দিয়ে বুলবুলের বন্ধু শাজাহান কবির ইকবালকে বিয়ে করেন তিনি।
সম্প্রতি একাধিক বিয়ে এবং আপত্তিকর কার্যকলাপে জড়িত থাকার কারণে বদলি হওয়া ওই স্কুল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১১ ইউপি সদস্য স্বাক্ষরিত লিখিত এ অভিযোগ মহাপরিচালক বরাবরে দেয়া হয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যেমে দেয়া অভিযোগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশও করেছেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের পুরান বাঁশতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুরজাহান বেগম কর্মরত থাকা অবস্থায় তার পুরাতন কর্মস্থল বোগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আবার ফেরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের পূর্ব পর্যন্ত বোগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। সেখানে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ের দপ্তরীর সাথে ওই শিক্ষিকাকে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া গেছে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন এলাকার মানুষ। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বিদ্যালয়ের দপ্তরীর সাথে ওই সময় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ওই শিক্ষিকা। পরে এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দাবির প্রেক্ষিতে ওই শিক্ষিকাকে পুরান বাঁশতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। সেখানে গিয়েও তিনি তার অন্যায় কার্যকলাপ অব্যাহত রাখেন। অবশেষে দপ্তরীর সাথে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়ে সুরজাহান অন্য একজনকে বিয়ে করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
বোগলাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিলন খাঁন বলেন, ওই শিক্ষিকা একজন বিয়েপাগল মানুষ। স্কুলে দপ্তরির সঙ্গে আপত্তিকর কার্যকলাপ এবং বিয়ে নাটকের কারণে এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে তাকে অন্য এলাকায় বদলি করা হয়। তিনি এতোই বেপরোয়া যে আবার বোগলা স্কুলে বদলি হয়ে এলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠানো তো দূরের কথা, এ নিয়ে এলাকাবাসী আন্দোলন করবে।
বোগলা রুছমত আলী রামসুন্দর স্কুল ও কলেজে গভর্নিং বডির সদস্য ও সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান শেখচান বলেন, ওই শিক্ষিকার সমস্যা অনেক। একজন শিক্ষকের কোনো বৈশিষ্ট্য তার মাঝে নেই। তার নৈতিক চরিত্র এবং স্বামী থাকাবস্থায় একের পর এক বিয়ে নাটকীয়তার কারণে এলাকাবাসী লজ্জিত। তিনি একজন বেপরোয়া নারী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোগলাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, ওই নারী বদলি হয়ে আমাদের স্কুলে এলে আমরাই বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাবো।
এসব বিষয়ের সত্যতা জানতে গণমাধ্যমকর্মীরা শিক্ষিকা সুরজাহান বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এসব ব্যাপারে তিনি মোবাইলে কথা বলতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে টানাহেঁচড়া করলে সাংবাদিক বা যে-ই হোক তার বিরুদ্ধে আমি মামলা করবো। বিয়ে করা অপরাধ না। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি সংসার জীবনে সুখেই আছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পঞ্চানন কুমার সানা বলেন, ২০২০ সালে স্কুলকক্ষে স্কুল দপ্তরির সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বোগলা থেকে বাঁশতলায় বদলি করা হয়। ওই শিক্ষিকা এখন আবার পূর্বের স্কুলে আসতে চাইলে এলাকাবাসী বদলি ঠেকাতে মহাব্যবস্থাপকের বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।