গ্রাহক ভর্তি ফ্রি ও বিভিন্ন ধরনের সুযোগসুবিধা দেওয়ার কথা বলে শাল্লায় সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে অন্তত ২০ লক্ষ টাকা মেরে উধাও হয়েছে কথিত স্মার্ট ওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের এক কোম্পানি।
ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে বিভিন্ন ধরণের সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০২০ সালের মাঝামাঝি শাল্লা উপজেলা সদরের কলেজ রোডে ইছাক মিয়ার বিল্ডিংয়ে দুটি অফিস কক্ষ ভাড়া নেন লাপাত্তা হওয়া কোম্পানি স্মার্ট ওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। বেশ কয়েকজন স্টাফসহ ইউনিট ম্যানেজারের দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের চতুর ঝলক চন্দ্র দাশকে। তারপর থেকে শুরু হয় জনপ্রতি ১২’শ টাকার বিনিময়ে সদস্য ভর্তির কাজ। এভাবেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে বানানো হয় প্রায় ১ হাজারের মত সদস্য।
শুধু তাই নয়, শাল্লা উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী খালিয়াজুড়ি উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষও তাদের প্রতারণার ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি।
জানা যায়, সদস্য ভর্তি ফ্রি করা হয়েছে ‘Money Receipt’ নামের একটি স্লিপের মাধ্যমে। গ্রামের সহজসরল মানুষের সাথে অন্যান্য লেনদেনগুলো করা হয়েছে কোন ডকুমেন্টস ছাড়াই। মানুষের সরলতার সুযোগ ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন স্মার্ট ওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ইউনিট ম্যানেজার ঝলক চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা ঝলক চন্দ্র দাশসহ এই কোম্পানির যারাই প্রতারণার সাথে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি দাবি জানিয়েছেন।
সদস্য ফ্রি ছাড়াও গ্রাহকদের নানাধরণের সেবা হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, ঘর, টিউবওয়েল ও চিকিৎসা সেবা দেওয়ার নামে প্রতারণা করে কারো কাছ থেকে ৫ হাজার, ৪ হাজার, ৩ হাজার টাকা করে ঝলক চন্দ্র দাশ ও তাদের অফিসে নিয়োজিত থাকা স্টাফদের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন স্মার্ট ওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মহা-ব্যবস্থাপক মতিউর রহমান (মানিক)।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, এই কোম্পানিতে ইউনিট ম্যানেজার ঝলক চন্দ্র দাশ শাল্লা ইউনিট ম্যানেজারের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তার পারিবারিক ও আর্থিক অবস্থা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছের মত দ্রুত বদলাতে থাকে। প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে ঝলকের বাড়িতে বানানো হয়েছে ঘর। তবে তাদের প্রতারণার বিষয়ে গ্রাহকেরা টের পাওয়ার পর থেকেই এই কোম্পানির সব স্টাফ, ইউনিট ম্যানেজার ঝলক চন্দ্র দাশসহ তাদের অফিস হঠাৎ উধাও হয়ে যায়।
একাধিক গ্রাহক জানান, ঝলকই এই কোম্পানির প্রতারণার মূল হোতা। তারা বিভিন্ন চেষ্টা করেও এখন আর ঝলকের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। এলাকার ছেলে হিসেবে ঝলককে-ই বিশ্বাস করে টাকা পয়সা দিয়েছেন, বিনিময়ে আমরা কিছুই পাননি।
ভুক্তভোগীরা আরো বলেন, ‘প্রতারণা করে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আমাদের অনেকের সদস্য ফরম নিয়ে ঝলক চন্দ্র দাশ ছিড়ে ফেলে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই কোম্পানির প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অনেক গ্রাহকই এখন দিশেহারা। না পাচ্ছে খুঁজে তাদের অফিস, না পাচ্ছে ঝলক চন্দ্র দাশসহ তার স্টাফদের ঠিকানা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৪-৬ মাস যাবত স্মার্ট ওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ভাড়া নেওয়া অফিসটিতে এখন তালা ঝুলছে। ইতোপূর্বেই এই কোম্পানির মহা-ব্যাবস্থাপক এই প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন কিছুদিন পর থেকে অফিসে ঝলককে পাওয়া যাবে ও তাদের কোম্পানি গ্রাহকদের সঠিকভাবে সেবা দিয়ে যাবে। কিন্তু তার কথা ও কাজে কোন রকমের মিল পাওয়া যায়নি! ঝলকের ব্যাবহৃত উল্লেখিত মুঠোফোনের দুটি নাম্বার বরাবরের মতোই বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে স্মার্ট ওয়ার্ক কোম্পানির প্রতারণার অন্যতম একটি পদ্ধতি ছিল হেলথ কার্ড সেবা। স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার নামে গ্রাহকদের নামে করা দেওয়া হয়েছে হেলথ কার্ড। লোক দেখানো হিসেবে কোম্পানিটি শুরুতে তাদের শাল্লা অফিসে একজন ডাক্তার এনে একদিন কিছুসংখ্যক গ্রাহককে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার নামে প্রতারণা করে অন্যান্য গ্রাহকদের কাছ থেকে ‘মানি রিসিপ্ট’ স্লিপ ছাড়াই বিভিন্ন মেয়াদে নেওয়া হয় হাজার হাজার টাকা। তবে ভুক্তভোগীরা এর সঠিক বিচার পাওয়ার আশায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর সহ বিভিন্ন দপ্তরে ঝলক চন্দ্র দাশসহ এই কোম্পানির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব ইতোপূর্বেই জানান, অফিসিয়ালভাবে নোটিশ জারি করে ঝলক চন্দ্র দাশকে ডেকে আনা হবে ও তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত এই লাপাত্তা কোম্পানি স্মার্ট ওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের বিরুদ্ধে শত শত মহিলা ভুক্তভোগী গ্রাহক গত ২৮মে শাল্লা কেন্দ্রীয় শহিদমিনার প্রাঙ্গণে বিশাল একটি মানববন্ধন পালন করেছেন।