শান্তিগঞ্জে চলাচলের রাস্তায় প্রতিবেশির বাধায় ঘরবন্দী দুই পরিবার

শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের চুরখাই গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে পুটিয়া নদী। নদীর উত্তর পাড় ঘেঁষে সত্তরোর্ধ্ব প্রমিলা দেব ও গোবিন্দ দাসদের বসতঘর। দু’টি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১১/১২জন। তাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ, কেউ শিক্ষার্থী, কেউ প্রতিবন্ধী। আবার কেউ আছেন শিক্ষকতা এবং সেবা পেশায়। প্রায় ২৫ বছর ধরে এ জায়গায় তাদের বসতি।

এতো দিন চলাচলে কোনো বাধা বিপত্তি না হলেও বছর দেড়েক ধরে প্রতিবেশি সুনীল কুমার দে ও সজল কুমার দে ওই দুই পরিবারকে চলাচলে বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন পরিবার দু’টি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দুই পরিবারের সদস্যরা। রাস্তায় বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় পরিবারগুলোর সদস্যদের চলতে হয় জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। নিজেদের ঘর থেকে বাঁশ-বেতের ঝোপের মধ্য দিয়ে কাদা মাড়িয়ে পুটিয়া নদীর উপর দিয়ে নৌকায় করে আসতে হয় চুরখাই গ্রামের প্রধান রাস্তায়।

এতে যেমন ভয় থাকে সাপ ও বন্যপ্রাণির আক্রমণের তেমনি চলাফেরায় পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। এছাড়াও নদীর পানিতে পড়ে নৌকা পারাপারের সময় শিশুদের প্রাণহানিরও শঙ্কা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বনজঙ্গলের মাঝখানেই প্রমিলা দেব ও গোবিন্দ দাসের বসত ঘর। চলাচলের জন্য যে রাস্তা আছে তা বন্ধ থাকায় বনজঙ্গলের মাঝখান দিয়েই চলাচল করেন তারা। একদিকে বেতের ঝোঁপ, অপর দিকে বাঁশ, করচ ও অন্যান্য বন। বলতে গেলে ছোটখাটো একটি জঙ্গল। এখানে যে কোনো ধরণের হিংস্র বন্য প্রাণি থাকা একেবারেই স্বাভাবিক। কর্দমাক্ত মাটিতে চলাচলও প্রায় অসম্ভব।

জঙ্গলের মধ্য দিয়ে আনুমানিক একশো মিটার জায়গার কাদা মাড়িয়ে পুটিয়া নদীতে এসে তারপর নৌকায় করে আসতে হয় চুরখাই গ্রামের প্রধান সড়কে। অপর দিকে প্রমিলা দেব ও গোবিন্দ দাসের বাড়ি থেকে পশ্চিম দিকে সুনীল কুমার দে’র ঘরের পেছনের ছোট খাল পর্যন্ত যে রাস্তা গিয়েছে তা বন্ধ। মানুষ চলাচল না করায় রাস্তায় বড় বড় ঘাস গজিয়েছে। পাশের খালে কোনো সাঁকো না থাকায় এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারছেন না ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সদস্যরা।

প্রমিলা দেব, তার মেয়ে রত্না দেব ও গোবিন্দ দাস বলেন, আমাদের বাড়ি থেকে খাল পর্যন্ত রাস্তায় কোনো সমস্যা না থাকলেও মূল সমস্যা খালের পশ্চিম পাড়ে। ওই জায়গাটি সুনীল কুমার দে ও সজল কুমার দে’র। সামান্য জায়গা পরেই আবার সরকারি সড়ক। এই সামান্য জায়গার উপর দিয়ে আমাদের চলতে হয়। এখানেই সুনীল কুমার দে ও সজল কুমার দে’র মূল আপত্তি। তাদের কথা হলো এদিকে আমরা চলাফেরা করতে পারবো না। এজন্য অনেক শালিস বৈঠক হয়েছে। অনেকে অনেক অনুরোধ অনুনয় করেছেন। পঞ্চায়েত বৈঠকে বসে তারা দু’জন বিষয়টি মেনে নিয়ে আমাদেরকে চলাচলের রাস্তা দিয়েছেন। পরে বিরেন্দ্র কুমার দে ওরফে বিজু নামের এক ব্যক্তির প্ররোচনায় পরে আমাদেরকে আবারও বাধা দিতে থাকেন। এভাবে একাধিকবার তারা এমনটি করেছেন। এ বিষয় নিষ্পত্তির স্বার্থে পীযুষ কান্তি দে নামের একজন লোক আমাদেরকে কিছু জায়গা দান করেছেন যেনো আমরা এই জায়গা বাদীগণের সাথে অদলবদল করতে পারি। সুনীল কুমার দে ও সজল কুমার দে আমাদের দেওয়া জায়গা গ্রহণ করে ব্যবহার করার পরও তারা আমাদেরকে চলাচলের জন্য রাস্তা প্রদান করছেন না। সাঁকোও বাঁধতে দিচ্ছেন না।

রত্না রানী দেব জানান, বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করলে সুষ্ঠু সমাধানের স্বার্থে আমরা মহামান্য আদালতের শরনাপন্ন হয়েছি। মহামান্য আদালত আমাদের পক্ষে দু’টি আদেশ দিয়েছেন। তবে এরপরও তারা আমাদের এই রাস্তায় চলাচল করতে দিচ্ছেনা।

পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের শালিস ব্যক্তি ও পূর্ব সাবেক চেয়ারম্যান রফিক খান, পঞ্চগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এনামুল কবির এনাম বলেন, কারো রাস্তা আটকানো কোনোভাবেই সমীচীন নয়। আমরা একাধিকবার বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা করেছি। মানবিক খাতিরে হলেও রাস্তা দেওয়া উচিৎ।

অভিযুক্ত সজল কুমার দে বলেন, আমার নিজের জায়গা দিয়ে তারা চলাচল করে, আমি কোনো দিন বাধা দেই নি। এখন তারা এদিকে স্থায়ী রাস্তা করতে চাচ্ছে। আপনার বাড়ির উঠানের উপর দিয়ে তো আর আপনি কাউকে রাস্তা দিবেন না? আমার নিজের বাড়ির নিরাপত্তার ব্যপার সেপারও তো আছে। তা ছাড়া তারা আমার বাড়ির উপর দিয়ে যাবে আর আমাদের আত্মসম্মানে আঘাত করে কথা বললে তো আর মেনে নেওয়া যায় না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নদীর পাড়ের দিকে শালিস ব্যক্তিরা আমার জায়গায় খুঁটি মেরে তাদের রাস্তা দিয়েছিলেন। আমাকে না বলে খুঁটি মারায় আমি সেখানে বাধা দিয়েছি।

বিরেন্দ্র কুমার দে ওরফে বিজু বলেন, আমার নিজের ভাতিজারা যদি পরামর্শ নিতে আমার কাছে আসে আমি তো না করতে পারি না। প্রমিলা দেব ও তার মেয়ে রত্না দেব বৃদ্ধ মানুষগুলোকে কোর্টে তুলেছে। আরেকজনের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে সে কাজ করছে। তাদের নিজেস্ব এক গোপাট আছে। তার বাবা গোপাট রেখে গিয়েছিলেন। সেই গোপাট দিয়ে তারা চলাফেরা করুক। নিরীহ মানুষগুলোকে হয়রানি করছে তারা।

পীযুষ কান্তি দে বলেন, আমি নিজের কিছু জমিও দান করেছি। কিন্তু তাতেও মানছেন না তারা। কারো রাস্তা আটকানো কোনো ভাবেই সুন্দর কাজ নয়।

শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।