যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আশিকুন নবী চৌধুরী বলেছেন, ‘বারকি, জন বারকি’ বইয়ের সাথে ব্রিটেনের যোগসূত্র প্রবল। অনেক ইন্টারেস্টিং বিষয় এখানে এসেছে। ভাষার আঞ্চলিকতা, মিশ্রণ জাতিকে এগিয়ে নেয়। এই বইটির ইংরেজি অনুবাদ করে ব্রিটিশ সোসাইটিতে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। ইংরেজি অনুবাদ হলে ব্রিটিশদের উপনিবেশ আমলের অনেক অজানা তথ্য জানতে সহায়তা করবে।
রোববার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় রাতে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ‘বারকি, জন বারকি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি।
বক্তব্যে আশিকুন নবী চৌধুরী আরও বলেন, লেখক উজ্জ্বল মেহেদীর লেখার মধ্যে এক ধরনের মোহ আছে। লেখা পড়তে ছবি দেখার যে ভাষাশৈলী, সেটা উজ্জ্বল মেহেদীর ‘বারকি, জন বারকি’ বইয়ে আছে। রবীন্দ্রনাথ ভাষা দিয়ে ছবি আঁকতেন। বারকি লেখক ছবি এঁকেছেন। আমি কিছু লেখা পড়েছি, ছবির মতো লেগেছে। ভাষার সারল্য, সরলতা দিয়ে মুগ্ধ করেছেন। একই ধরণের লেখার যাদু ছিল সাংবাদিক এস এম আলীর। উজ্জ্বল মেহেদী সাংবাদিক এস এম আলীর উত্তরসূরি। বইটি ইংরেজিতে অনুদিত হওয়া দরকার ব্রিটিশ-বাংলা কানেক্টভিটির জন্য। বইটির বিষয়বস্তু ইংরেজি অনুবাদের দাবি রাখে। আমি অনুরোধ করবো, এ উদ্যোগ এই অনুষ্ঠানের পর নেওয়া হোক।
‘মাসিক বিলেত’ ও ‘রানার মিডিয়া’র আয়োজনে লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ‘মাসিক বিলেত’র সম্পাদক সাঈম চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা।
বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে সফর করা সাংবাদিক ছামির মাহমুদকেও সংবর্ধিত করা হয়। অনুষ্ঠানে বিলেত মিডিয়ার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরু ফুল দিয়ে স্বাগত জানান সাংবাদিক ছামির মাহমুদকে। এসময় লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদের নেতৃত্বে প্রেসক্লাবের গিফট ব্যাগ তুলে দেন ক্লাব নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রানার মিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা আ স ম মাসুম। এরপর বক্তব্য দেন, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ম্যাক্স মিডিয়ার কর্ণধার, সাংবাদিক আব্দুস সাত্তার, লেখক ও কবি হামিদ মোহাম্মদ, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক স্পিকার আহবাব হোসেন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের কমিউনিকেশন অফিসার ও লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি মাহবুব হোসেন, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ, সাংবাদিক আনসার আহমেদ উল্লাহ, কোষাধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ, ইভেন্ট সেক্রেটারি এমরান আহমেদ, প্রথম নির্বাহী সদস্য আহাদ চৌধুরী বাবু, অনলাইন ২৬শে টিভির কর্ণধার জামাল খান, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ফারুক, সাংবাদিক হাসনাত চৌধুরী, সোহাগ জাদু ও খালেদ মাহমুদ রনি।
আয়োজকেরা জানান, বইটির কাহিনি ব্রিটিশ আমলের বাংলাদেশের। তবে বারকি নৌকার নির্মাতা জন বারকি ব্রিটিশ নাগরিক। এজন্য বইটির মোড়ক উন্মোচন যুক্তরাজ্যে করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে লেখকের প্রতিনিধি হিসেবে দেয়া বক্তৃতায় ছামির মাহমুদ আয়োজক ও অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ব্রিটিশ ও বাংলার যোগসূত্র কত যে গভীর, স্থানীয় ইতিহাস ঘেঁটে একটি নৌকার মাধ্যমে তা উন্মোচিত হয়েছে। ব্রিটিশ সংস্কৃতিরও একটি অংশ ‘বারকি, জন বারকি’ বইটি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, উজ্জ্বল মেহেদীর ‘বারকি, জন বারকি’ ইতিহাসের মিশ্রণে রূপক গল্প। যেখানে ইতিহাস হারিয়েছে, সেখানে গল্প এসে সেই জায়গা পুনরুদ্ধার করেছে। সিলেট ও ব্রিটিশ সামাজিক বিকাশের জন্য ইতিহাসের এই আখ্যান অমূল্য সম্পদ।
দ্বিতীয় পর্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আশিকুন নবী চৌধুরী সাংবাদিক ছামির মাহমুদ সম্পর্কে বলেন, আপনাকে আজকে সংবর্ধিত করা হলো মানে একটি গুরুদায়িত্ব নিয়ে আপনি সিলেটে ফিরে যাবেন। দেশে গিয়ে এই বিলেতের কথা বলবেন। বিলেতের সাংবাদিকদের কথা বলবেন।
সংবর্ধিত সাংবাদিক ছামির মাহমুদের পেশাগত জীবনের সাফল্য কামনা করে সৈয়দ নাহাশ পাশা বলেন, আপনার সাংবাদিকতার অনুসন্ধান প্রতিনিয়ত সিলেটকে জানতে আমাদের সহায়তা করছে। সেই ধারা অব্যাহত থাকুক।
উল্লেখ্য, সিলেট অঞ্চলের নিজস্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী ‘বারকি’ নৌকা নিয়ে সাংবাদিক উজ্জ্বল মেহেদী তার পেশাজীবনের সূচনাকাল থেকে পর্যবেক্ষণ করেন। বিভিন্ন সময় বারকি ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে প্রতিবেদনও করেছেন। প্রায় ২৫ বছরের পর্যবেক্ষণ আর বাংলাদেশে ব্রিটিশ শাসনকালের সূচনাপর্বের ইতিহাস তালাশ করে জলজীবিকার জলোপাখ্যান ‘বারকি, জন বারকি’ রচনা করেন। এর আগে বারকি নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেছেন তিনি।
ঢাকায় চলতি বছরের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে ‘বারকি, জন বারকি’। বইটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান চৈতন্য প্রকাশন। প্রচ্ছদ করেছেন খ্যাতিমান প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব এষ। বারকি চিত্র অঙ্কন করেছেন অরূপ বাউল। জলোপাখ্যান সচিত্রকরণ করেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশু চিত্রশিল্পী সিলেটের জালালাবাদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী নওশীন আজিজ। বইটি সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বই বিপণিকেন্দ্র ও অনলাইন বিপণন রকমারিতে পাওয়া যাচ্ছে।