তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দুটোতেই অর্ধশতক হাঁকিয়ে স্বাগতিকদের সিরিজ জয়ের উল্লাসে ভাসানোর নায়ক ছিলেন সিকান্দার রাজা। আর ওয়ানডে সিরিজে আরো বিধ্বসী রূপে এই ডানহাতি। যার ব্যাটিং আঘাতে ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশ দল।
প্রথম ম্যাচে ৩০৪ রান টপকাতে নেমে হার না মানা ১৩৫ রানের ইনিংস খেলে জেতান জিম্বাবুয়ে দলকে। আজ রোববার দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের দেওয়া ২৯১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমেও দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দেন, শতক হাঁকিয়ে খেলেন ১১৭ রানের ইনিংস।
অনবদ্য রাজার কল্যাণে ২০১৩ সালের পর, অর্থাৎ দীর্ঘ ৯ বছর পর বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল জিম্বাবুয়ে। একই সঙ্গে উড়তে থাকা লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের টেনে হেঁচড়ে মাটিতে নামাল তারা। সম্প্রতি একদিনের ক্রিকেটে রীতিমত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল টাইগাররা। নিজেদের খেলা শেষ ৫ ওয়ানডে সিরিজের সবগুলোতেই জয়। যার মধ্যে আছে শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, উইন্ডিজের মতো দল।
এদিন অবশ্য জিম্বাবুয়ে হয়ে শতক পেয়েছেন তাদের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রেজিস চাকাভা। ৫৫ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার অভিষেক সেঞ্চুরি। এ ম্যাচে রাজা-চাকাভা মিলে গড়েছেন অনবদ্য এক রেকর্ড। পঞ্চম উইকেট পার্টনারশিপে দুইজন যোগ করেন ২০১ রান। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে পঞ্চম উইকেটে এর আগে দুইশ রানের জুটি ছিল না তাদের। দেশটির হয়ে যেকোনো উইকেটে তাদের এই জুটি পঞ্চম সর্বোচ্চ।
ব্যাটিংয়ে এমন রাজকীয় ইনিংস খেলার পাশাপাশি বল হাতেও কম যাননি রাজা। ১০ ওভারে কোটা পূর্ণ করে ৫৬ রান দিয়ে একাই নেন ৩ উইকেট। যা জিম্বাবুয়ের পক্ষে সর্বোচ্চ।
এমন ম্যাচ জেতানো ইনিংসের জন্য রাজা চাইলে মেহেদী হাসান মিরাজকে বড় করে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারেন। ইনিংসের ২৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি অনসাইডে খেলেন রাজা। ননস্ট্রাইক প্রান্তে থাকা চাকাভা রান নিতে দৌড়ান। রাজা ততক্ষণে দেরি করে ফেলেন। ফিল্ডার দ্রুত ননস্ট্রাইক প্রান্তে থাকা বোলার মিরাজকে বল দেন। রাজা পৌঁছার আগেই মিরাজ উইকেট ভাঙেন ঠিকই কিন্তু সে হাতে বল ছিল না। নিশ্চিত রানআউট থেকে বেঁচে যান রাজা। ৪২ রানে পান নতুন জীবন।
সেই রাজা আর চাকাভা বাংলাদেশের দেওয়া ২৯১ রানের টার্গেটে নেমে ২০১ রানে পার্টনারশিপ গড়ে দলকে জেতান। যদিও তাদের ইনিংসের শুরুটা ভালো হতে দেননি বাংলাদেশি বোলাররা। ইনিংসের তৃতীয় বলেই কাইটানোকে শূন্য রানে ফেরান একাদশে ফেরাম হাসান মাহমুদ। তৃতীয় ওভারে আবার আঘাত এই ডানহাতি পেসারের। আউটসাইড অফে পিচ করা বলে পরাস্ত কাইয়া। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় মুশফিকের হাতে। আগের ম্যাচে শতক হাঁকিয়ে জিম্বাবুয়েকে জেতানো কাইয়া, এবার দ্রুত বিদায় নেন।
১৩ রানে দুই উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে দলীয় কোটা পঞ্চাশ ছোঁয়ার আগে হারায় আরো ২ উইকেট। ২ রানে থাকা মাধেভেরেকে ফেরান মিরাজ, ওপেনার মারুমানিকে আউট করে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। এরপরের গল্পটা লিখেছেন রাজা-চাকাভা। সফরকারী বোলারদের শাসন করে ১১৫ বলে ৭ চার ও ৪ ছয়ে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন রাজা। খানিন পরে শতক ছুঁয়েছেন চাকাভা। তার সেঞ্চুরি আসে ৭৩ বলে।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির পর মিরাজের দ্বিতীয় শিকার হন চাকাভা। ৭৫ বলে ১০২ রানের ইনিংসটি সাজান ১০ চার ও ১ ছয়ে। পরে ৮ চার ও ৪ ছয়ে রাজার ১২৭ বলে ১১৭ ও অভিষেক হওয়া টনির ১৬ বলে অপরাজিত ৩০ রানে ৫ উইকেট ও ১৫ বল হাতে রেখে বাংলাদেশের দেওয়া ২৯১ রানের লক্ষ্য টপকে যায় জিম্বাবুয়ে। এতে টানা দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় করে তারা।
এর আগে টস হেরে একাদশে ৩টি পরিবর্তন নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরু পায় বাংলাদেশ দল। ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন ওপেনার তামিম ইকবাল। ব্যাক টু ব্যাক ফিফটি তুলে নেন এই বাঁহাতি, ওয়ানডেতে আজ করা তার ৫৫তম অর্ধশতক আসে ৪৩ বলে। যেখানে ১০ চার ও ১ ছয়ে করেন ৪৪ রান। অর্থাৎ ১১ বলেই ৪৪ করেন তিনি। কিন্তু ৫০ রান করে ফেরা তামিম ৪৫ বলের মধ্যে ৩০টি-তে কোনো রানই নেননি।
তামিমের আউটের পর দুর্ভাগ্যক্রমে ফিরে যেতে হয় এনামুল হক বিজয়কে। নাজমুল হোসেন শান্তর সোজাসুজি খেলা বল নন স্ট্রাইক প্রান্ত দিয়ে যেতে বোলার চিভাঙ্গা হাত ছুঁয়ে দেন, সরাসরি ভাঙে স্টাম্প। নিজের জায়গা থেকে বেরিয়ে যাওয়া বিজয় আউট হন ৩ চারে ২৫ বলে ২০ রান করে। এরপর শান্ত আর মুশফিকুর রহিম ইনিংস টানার চেষ্টা করেন। তাদের তৃতীয় উইকেট জুটি থেকে আসে ৫০ রান। মুশফিক ১ চারে ৩১ বলে ২৫ রানে আউট হলে ভাঙে এই পার্টনারশিপ।
শুরুর এই তিন ব্যাটসম্যান ফিরে যাওয়ার পর খোলস বন্দি বাংলাদেশ দল। টেস্ট মেজাজে ব্যাট করে দলের রান রেট কমিয়ে ৫৫ বলে ৩৮ রানে ফেরেন শান্ত। যেখানে ৬-এর ওপর চড়েছিল রান রেট, সেখানে ৩০ ওভার শেষে ৫ গড়ে ৩ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে সংগ্রহ ১৫১ রান। চতুর্থ উইকেটে মাহমুদউল্লাহ ধীরগতিতে রান তোলেন। তবে অন্যপ্রান্তে হাত খুলে খেলে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন আফিফ হোসেন। সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৪টি চারে ৪১ বলে ৪১ রানে সাজঘরে ফেরেন আফিফ।
খোলস বন্দি মাহমুদউল্লাহ দেখেশুনে খেলে ৪৭তম ওভারে পান অর্ধশতকের দেখা। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ৬৯ বল খেলে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। তার আগে ১২ বলে ১৫ রান করে আউট হন মেহেদী হাসান মিরাজ। শেষদিকে ফিফটির পর ঝড় ওঠে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। তার সমান ৩টি করে চার-ছয়ে ৮৩ বলে ৮০ রানের কল্যাণে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ২৯০ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ দল। ইনিংসে ১৪৯টি ডট না হলে এই সংগ্রহ আরো বড় হতো।