গেল কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় রাখাইন রাজ্যে সংঘর্ষ চলছে। যার প্রভাব পড়ছে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর। বিশেষ করে বান্দরবানের ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।
এদিকে প্রায়ই গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে তুমব্রু সীমান্তে। অন্যদিকে মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদের কয়েকজনের সঙ্গে ফোনে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। এক পক্ষ বলছে, সেখানে তারা চাপে আছে। অন্য পক্ষ বলছে, ঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে সেনাবাহিনী। সেই ছবি এসেছে ঢাকা পোস্টের হাতে। ফলে অনেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার কথা ভাবছেন। ফলে বাংলাদেশে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, এক মাস ধরে প্রতিদিন সীমান্তের ওপার থেকে গোলাগুলির শব্দ আসছে। গত কয়েক দিন যুদ্ধবিমান আর হেলিকপ্টার থেকে গোলা ছুঁড়তে দেখা গেছে। কিন্তু মিয়ানমার অংশে গুলির শব্দ আর থেমে থেমে মর্টারশেলের বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠছে তুমব্রু সীমান্ত। কখনো তাদের মর্টারশেল উড়ে আসছে এ পাড়ে। শুক্রবারও উড়ে আসে মিয়ানমারের একটি গোলাবরুদ। সীমান্তে গা ঘেঁষে টহল দেয় সেদেশের সেনাবাহিনী।
৪০ নম্বর সীমান্ত পিলারের রাবার বাগান শ্রমিক গোলাম মাওলা (৪৫)। তিনি বলেন, গত মাসে বাগানে দুটি মর্টারশেল এসে পড়ে। প্রায় সময় আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দিতে নিচে গুলি বর্ষণ করছিল। মাটি থেকেও ওপরের দিকে গুলি ছোড়া হচ্ছিল। দূরের আকাশে চার-পাঁচটি যুদ্ধবিমান চক্কর দিয়ে হেলিকপ্টারকে পাহারা দিচ্ছিল। হেলিকপ্টার থেকে শত শত গুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপ করা হয়। বিকট শব্দে ওই এলাকায় অবস্থান না করে তুমব্রু বাজারের দিকে পালিয়ে এসেছে শ্রমিকরা। শুনছি মায়ানমারে বাংলাদেশ সীমান্তে পাশে থাকা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে।
মিয়ানমার অংশে থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। এক রোহিঙ্গা বলেন, তাদের ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না সেনাবাহিনী। তবে চাপ বেশি রাখাইনদের ওপর যারা আরাকান আর্মির সমর্থক। তারা পালাতে চাই।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক মাঝি বলেন, রোহিঙ্গাদের অনেকেই মিয়নমারে আছে জিম্মি দশায়। এ পাড়ে চলে আসতে চায় তারা।
রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ভারত, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে। মিয়ানমার থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা আসলে উখিয়াবাসীর আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো পথ থাকবে না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ইয়াবা ব্যবসা, অস্ত্রবাজি ও সন্ত্রাস, ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে স্থানীয়দের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আমরা স্থানীয়রা বিপদে আছি, আমরা কোথায় যাব?’ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সিলগালা করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে শুনেছি, এখনো কোনো মিয়ানমারের নাগরিক অনুপ্রবেশ করতে পারেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় এলাকাবাসীদের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার (০৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজারে হিউম্যান রিলিফ ফাউন্ডেশন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, সীমান্ত আইন-লঙ্ঘন নিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের উত্তপ্ত পরিস্থিতি গভীরভাবে অবলোকন করা হচ্ছে। নতুন করে আর একজন রোহিঙ্গাকেও বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এজন্য সতর্ক রয়েছে বিজিবি।
৩৪ বিজিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, তুমব্রু সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা সব সময় সতর্ক অবস্থানে আছে। নতুন করে কাউকে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তুমব্রু এলাকায় নতুন করে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বিজিবি কড়া নজরদারি রেখেছে।
সূত্র : ঢাকা পোস্ট