যেভাবে মেধাবী ছাত্র থেকে ‘জঙ্গি’ হন সিলেটের সোহান

মাকে উদ্দেশ্য করে লেখা একটি চিরকুট পড়ার টেবিলে রেখে তিন মাস আগে বাসা থেকে বের হয়ে যান সিলেটের তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থী মো. তাওয়াবুর রহমান সোহান ওরফে মিন্টু ওরফে জাকির আলম। ওই চিরকুটে লেখা ছিল ‘আমার জন্য দোয়া করো। আর কাউকে কিছু বলিও না, বললে বিপদ হবে’। এরপর জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়া নামে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন তিনি।

তাওয়াবুর রহমান সোহানের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বুল্লা ইউনিয়নের পাটুলি গ্রামের। তবে সোহানের পিতা মৃত কুতুবুর রহমান ব্যাংকের চাকরির সুবাদে গত ২০ বছর ধরে তাদের পরিবার সিলেটে বসবাস করছে।

দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সোহান সবার ছোট। ২০১৮ সালে সোহান ওসমানী মেডিকেল হাইস্কুল থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। ২০২০ সালে সিলেট বর্ডার গার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখা থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে সিলেট এমসি কলেজে বোটানি শাখায় ভর্তি হন।

সোহান লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও জিম করতেন। কিন্তু হঠাৎ করে তার মধ্যে একটি পরিবর্তন দেখা দেয়। তাবলিগ জামায়াতের সঙ্গে সোহানের সম্পর্ক ছিল। মাঝে মধ্যে ২-৩ দিনের জন্য চিল্লায় যেতেন। গত তিন মাস আগে চিল্লার কথা বলে মাকে একটি চিরকুট লিখে সেটি পড়ার টেবিলে রেখে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। মাঝে-মধ্যে ইমোতে মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন। ভালো আছেন বলে জানাতেন।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রিতে দুর্গম পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়ার ১৭ সদস্য ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের (কেএনএফ) ৩ সদস্যকে অস্ত্র ও গোলাসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গত বুধবার সকালে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিষয়টি সাংবাদিকদের জানালে তাওয়াবুর রহমান সোহানের বিষয়টি প্রকাশ প্রায়। র‌্যাবের হাতে আটক হওয়ার পর সোহানের জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়ায় জড়িত থাকার তথ্য বেরিয়ে আসে।

সোহানের পরিবারের এক সদস্য বলেন, সোহান অনেক মেধাবী ছাত্র ছিল। তাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। গত তিন মাস আগে হঠাৎ করে চিল্লার কথা বলে চিরকুট লিখে সে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। এখন সমাজের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। সোহানকে ফলো করে তাকে এ সংগঠনে যুক্ত করা হয়েছে। কখন কাকে ফাঁদে ফেলে দেয় সতর্ক থাকা দরকার। আমার ভাইয়ের মতো এমন পরিণতি যেন কারও না হয়।

মাধবপুরের পাটুলি গ্রামের ইউপি সদস্য শফিক মিয়া বলেন, সোহানের বাবা মারা গেছেন ২ বছর হবে। মারা যাবার আগে মাঝে-মধ্যে পরিবারের সদস্যরা পাটুলি গ্রামে আসা-যাওয়া করতেন। তবে ২০ বছর ধরে তারা স্থায়ীভাবে সিলেটে বসবাস করছেন। সোহানও বাবার সঙ্গে পাটুলি গ্রামে আসা-যাওয়া করত। সোহান শান্ত, ভদ্র ও মেধাবী ছিল। এমন পরিবারের ছেলে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছে এ খবর শুনে গ্রামবাসী হতবাক হয়েছেন।

মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রাথমিকভাবে পাটুলি গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন মাস আগে চিল্লার কথা বলে সোহান সিলেটের বাসা থেকে বের হয়ে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয়। র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর জানা যায়, সোহান জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়ার সঙ্গে জড়িত। তাদের গ্রামের বাড়িতে পরিবারের কোনো সদস্য বসবাস করেন না।