প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দিনের রাষ্ট্রীয় ভারত সফরে সঙ্গীদল থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বাদ পড়া নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। অনেকে নানাভাবে এটিকে বিশ্লেষণও করছেন। এমন আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
তিনি জানিয়েছেন, মন্ত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই এই সফর থেকে বাদ যেতে হয়েছে মোমেনকে।
মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে সম্প্রতি তুমুল আলোচিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একের পর এক বেফাঁস মন্তব্যে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে অসন্তোষের বিষয়টিও প্রকাশ পায়। তবে শেখ হাসিনার ভারত সফর থেকে মন্ত্রী বাদ পড়ে যাবেন, এমনটি ধারণাতেও ছিল না। কারণ, সাধারণত রাষ্ট্রীয় সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর সরকার প্রধানের সঙ্গেই থাকেন।
কিন্তু সোমবার শেখ হাসিনা দেড় শতাধিক সফরসঙ্গী নিয়ে ভারত যাত্রার সময় মোমেন যাননি। দুই দেশের মধ্যকার অমীমাংসিত নানা সমস্যার সমাধানে দুই দেশের সরকারের কী চিন্তা, এ নিয়ে যখন সংবাদ বা আলোচনা বেশি হওয়ার কথা, তখন চর্চাটা হচ্ছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর না যাওয়া।
আগের দিন মন্ত্রী যখন এই সফর নিয়ে ব্রিফিং করছিলেন, তখন তিনি জানিয়েছেন, তিনিও যাচ্ছেন প্রতিবেশী দেশটিতে। তবে সেটির ব্যতিক্রম হলো কেন, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। ফোন করে মন্ত্রীর বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
পরে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সংক্ষিপ্ত একটি বাক্য পাওয়া যায়। এক প্রশ্নে তিনি তিনি এক কথায় উত্তর দিয়ে বলন, ‘হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন!’
একই কথা বললেন দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ। তিনিও বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি।’
তবে মন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা কেমন, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে নাকি বাসাতেই বিশ্রামে থাকবেন এসব বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আলোচিত মোমেন :
গত ১২ আগস্ট মন্ত্রী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বোঝাতে গিয়ে সিলেটের সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈশ্বিক মন্দায় অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে; একটি পক্ষ প্যানিক ছড়ানোর জন্য এমন কথা বলে।’
মন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে তুমুল সমালোচনা ও ট্রলের মধ্যে ১৪ আগস্ট সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি তো ট্রু সেন্সে (আক্ষরিক অর্থে) বেহেশত বলিনি। এটা ছিল কথার কথা। কিন্তু আপনারা তো সবাই মিলে আমারে খায়া ফেললেন।’
এ নিয়ে সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ১৮ আগস্ট চট্টগ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। শেখ হাসিনার সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা করতে অনুরোধ করেছি।’
তার এই বক্তব্য ব্যাপক সমালোচনা হলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই দেন বিরূপ প্রতিক্রিয়া।
ঢাকায় জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলেন, ‘যিনি এ কথা বলেছেন সেটি তার ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে। এটি আমাদের সরকারেরও বক্তব্য না, দলেরও বক্তব্য না। এই বক্তব্যের কারণে ভারতও লজ্জা পাবে।’
‘কীভাবে আমরা এই কথা বলি! বন্ধু বন্ধু আছে। অহেতুক কথা বলে এটি নষ্ট করবেন না’- আরও বলেন বিস্মিত আওয়ামী লীগ নেতা।
এর মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আবার কথা বলেন। গোপালগঞ্জে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে তিনি সাংবাদিকদেরকে তার আগের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে ভারতেরও মঙ্গল।
সেদিন তিনি বলেন, ‘আমি ভারত সরকারকে বললাম, আপনার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে শেখ হাসিনা থাকায় স্থিতিশীলতা এসেছে। এই স্থিতিশীলতা আসায় আমাদের দেশেরও মঙ্গল হচ্ছে, আপনার দেশেরও মঙ্গল হচ্ছে। আপনার দেশেও ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হচ্ছে। সুতরাং স্থিতিশীলতা সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট। রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা খুব দরকার। তাতে আপনার দেশেরও মঙ্গল হবে, আমাদের দেশেরও মঙ্গল হবে।’
মন্ত্রীর এসব বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নেতারা সরকারকে আক্রমণ করছেন এই বলে যে, মন্ত্রী সত্য কথা বলে দিয়েছেন। তাদের দাবি, আওয়ামী লীগ ভারতের অনুগ্রহে ক্ষমতায় থাকে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সরকারের জন্য বিব্রতকর বক্তব্য থামছিলই না। মিয়ানমারের গোলা বাংলাদেশ সীমান্তে পড়ার বিষয়ে শনিবার সিলেটে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলা বাংলাদেশে জঙ্গল এলাকায় পড়েছে। সেগুলো বিস্ফোরিত না হওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এটি গুড নিউজ।’
সূত্র : নিউজ বাংলা