যুক্তরাজ্যের স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব বাড়ছে বাংলাদেশিদের

যুক্তরাজ্যে মূলধারার রাজনীতিতে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের। যুক্তরাজ্যের প্রায় সব সিটি, টাউনে কনজারভেটিভ, লেবার পার্টি. লিবডেমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শহ শত কর্মী সমর্থকদের তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকরা। সম্প্রতি স্থানীয় কাউন্সিলে প্রায় এক ডজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক স্পিকার, মেয়র, ডেপুটি মেয়র, ডেপুটি পুলিশ এন্ড ক্রাইম কমিশনারের দায়িত্ব পেয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের লোয়েস্টওফট কাউন্সিলে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন নাসিমা বেগম। এর আগে তিনি তিনবার লোয়েস্টওফট কাউন্সিলে ডেপুটি মেয়র ছিলেন। নাসিমা বেগম বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলি ইউনিয়নের কামারখাল গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান প্রায়াত আব্দুর হাশিমের মেয়ে।

সাসেক্স অঞ্চলের ওয়াদিং বারা কাউন্সিলের সিভিক মেয়ার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ইবশা চৌধুরী। সম্প্রতি তিনি কাউন্সিলরদের ভোটে এক বছরের জন্য মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ মেয়র। এর আগে তিনি কাউন্সিলার, ডেপুটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বাড়ি সিলেট নগরের খুররামখলা আবাসিক এলাকায়।

হ্যারো কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সেলিম চৌধুরী। তিনি কনজারভেটিব পার্টি থেকে চলতি মাসে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সেলিম এর আগে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর পৈত্রিব বাড়ি সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার নগরীকাপন গ্রামে।

ল্যাংকা শায়ারের কাউন্টির বার্নলি বারা কাউন্সিলে প্রথমবারের মত বাংলাদেশি কমিউনিটি থেকে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন শাহ মনোয়ার হোসেন। শাহ মনোয়ার এর আগে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন।

ওয়েস্ট মিডল্যান্ডের স্যান্ডওয়েল কাউন্সিলে প্রথম বাংলাদেশি মহিলা হিসেবে হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দা আমিনা খাতুন। এর আগে তিনি কাউন্সিলরের দায়িত্বে ছিলেন।

চেস্টার সিটির ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন শিরিন আক্তার। তিনিও প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ডেপুটি মেয়ার নির্বাচিত হন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার উত্তর ধর্মদা গ্রামে।

এনফিল্ডের মেয়ার নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ ইসলাম। তিনি ২০২৪-২০২৫ সালের জন্য মেয়ার নির্বাচিত হন। তাঁর বাড়ি পৈত্রিক বাড়িও সিলেট বিভাগে।

নর্থ লন্ডনের হ্যারিংগে কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আহমেদ মাহবুব লাজিম। লাজিম সুনামগঞ্জের ছাতকের মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যারিস্টার গোলাম জিলানী মাহবুবের ছেলে।

ব্রাইটন এন্ড হোভ সিটি কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি সাউথ এশিয়ার প্রথম মুসলিম ও প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ব্রাইটন এন্ড হোভ কাউন্সিলের মেয়ারের দায়িত্ব পেলেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি সিলেটে।

লন্ডন বুরে‌্যা অব টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত সাইফ উদ্দিন খালেদ। বেডফোর্টশায়ারের ডেপুটি পুলিশ এন্ড ক্রাইম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত উম্মে আলী। তিনি লুটন বারা কাউন্সিলের কাউন্সিলের হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

বার্নলি বারা কাউন্সিলের মেয়র শাহ মনোয়ার হোসেন শাহ মনোয়ার হোসেন বলেন, গত দশ বছর আমি কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেছি, এই দায়িত্ব পালন করতে আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ ভোটাররা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। এখানে আমি প্রথম বাংলাদেশি মেয়র, আশা করছি নতুন প্রজন্ম এদেশে মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হবে, আরও উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে এবং কমিউনিটির সেবা করতে পাবরে।

ওয়াদিং বাবার কাউন্সিলের সিভিক মেয়র ইবশা চৌধুরী বলেন, ছোট বেলা থেকেই রাজনীতির প্রতি আগ্রহ ছিল, পরে মূলধারার রাজনীিিততে যোগ দেই। ভবিষ্যতে আমি আরও বড়পরিসরে কাজ করতে চাই।

লুটনের প্রবীণ কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব খুররম শফিক চৌধুরী বলেন, যুক্তরাজ্যের মূলধারার রাজনীতি, নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। এমপি, স্পিকার, মেয়র, ডেপুটি মেয়ার, কাউন্সিলর হয়ে তাদের যোগ্যতার জানান দিচ্ছেন, কমিউনিটিতে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করছেন।

প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রোশনারা আলী, টিউলিপ ছিদ্দিক, আপসানা বেগম, রুপা হক প্রতিনিধিত্ব করছেন। এছাড়া টাওয়ার হেমলেটসের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন লুৎফর রহমান।