দলিল জালিয়াতির মাধ্যমে বাড়ির জায়গা দখলের চেষ্টাকারী চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী প্রতারকচক্রকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ সুরমার বারখলা গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক যুক্তরাজ্য প্রবাসী লতিবুর রহমান। তিনি তাঁর জায়গা রক্ষায় বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তা কামনা করেছেন।
বুধবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে তাঁর পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান লতিবুর রহমানে নাতি ইজাজুর রহমান কাফি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কাফি বলেন, লতিবুর রহমানের বড় ভাই বজলুর রহমানের ছেলে সাবের রহমান তাঁর জায়গা-জমি দেখাশোনা করতেন। তিনি প্রায়ই তাঁর কাছ থেকে কারণে-অকারণে টাকা আদায় করতেন। বিভিন্ন সময়ে ভাতিজা সাবেরসহ তার পরিবারকে প্রায় কোটি টাকা সহায়তা করেছেন লতিবুর।
তিনি বলেন, সম্প্রতি লতিবুর রহমানকে ফোন করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন সাবের। তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাবের রহমান লতিবুর রহমানের জন্ম নিবন্ধন, ভোটার আইডি কার্ড, পাসপোর্টের নম্বর ইত্যাদি জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে আমমোক্তারনামা তৈরি করে দক্ষিণ সুরমা মমিনখলা মৌজার জেএল নং এসএ ১১১, বিএস ৭৮, এসএ ছাপা খতিয়ান ৩৮৮ বিএস ৮২৬ খতিয়ানের এসএ দাগ ৩০২ ও বিএস ৮১৬ নং দাগের ৭৩ শতক ২৮ পয়েন্ট জমি সাবের রহমানকে দাতা সাজিয়ে সবুজ আহমদ নিজের নামে দলিল সম্পাদন করেন। সবুজের মূল বাড়ি লাউয়াই উম্মরকুল গ্রামে। বারখলা তার শ্বশুড়বাড়ি। দলিলে তার ভগ্নিপতির নাম আব্দুল খালিক বলে উল্লেখ করলেও তার আসল নাম মো. লিলু মিয়া। তারা ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি সিলেট সদর ভূমি অফিস ৪৭২ নং জাল আমমোক্তারনামা তৈরি করে এই ৭৫ শতক ভূমি পৃথক নামজারি করে নেয়। এ অফিসের সহকারী ভূমি কমিশনার আশিক মাহমুদ সার্ভেয়ার ও তহশিলদার বড় অংকের ঘুষের বিনিময়ে জাল আমমোক্তারনামা দিয়ে ২৬৫০/২০১৯ দলিলের মাধ্যমে ১৬৬২ খতিয়ানের ৩০২ দাগে ১৬ শতক, ৭৭৯৯৫/১৯ দলিল মূলে ৯ শতকসহ মোট ২৫ শতক ভূমি একই কমিশনার জাল নামজারি করে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এসব জালিয়াতির খবর পেয়ে লতিবুর রহমানের ছোট ভাই মুহিবুর রহমান দেশে এসে ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সাবের রহমান ও তার ভাই মহশিন রহমান, লোকমান মিয়ার ছেলে সাহেদ আহমেদ, সিলেট সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক নিজামুল ইসলাম, রাশেদুজ্জামান আখতার, কয়েছ আহমদ, সবুজের ভাগ্নে দলিলের সাক্ষী জনি, ভার্থখলা স্বর্ণালী ৩২ এর ময়নুল ইসলামের ছেলে শামীম আহমদ, লাউয়াই উম্মরকুল গ্রামের সবুজ আহমদ, ভার্থখলার শামিম আহমদের ছেলে রাজনসহ মোট ২৩ জনকে আসামি করে সিলেটের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা (সিআর ১৭২/২০২১) দায়ের করেন। মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে এবং সাবের রহমান, সবুজ আহমদ, নিজামুল ইসলামসহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে জালিয়াতি প্রমাণ হয়ে বলে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। তবে রিপোর্টে অধিকাংশ আসামিকে বাদ দেয়ায় আমরা নারাজি দাখিল করি।
লিখিত বক্তব্যে কাফি আরও বলেন, এরপর কোতোয়ালি থানার দুলাল নামের একজন দারোগাকে নিয়ে সবুজ আহমদ ও তার ভাড়াটিয়া লোকজন আমাদের প্রায়ই প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তারা যেকোনো সময় আমাদের হত্যা করতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা। সবুজ আহমদ যেকোনো সময় ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসে জমি দখল করতে পারে এমন আশঙ্কায় লতিবুর রহমান দেশে এসে দক্ষিণ সুরমা থানায় বিবিধ মামলা (নং ৩৫/২০২২) দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত করে জালিয়াতির প্রমাণ পেয়ে যখন তখন খুনের ঘটনা আশঙ্কা প্রকাশ করে এডিএম আদালতে প্রতিকার চেয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন। লতিবুর রহমানের ভাতিজা সাবের ৪২৭/২০১৯ দলিলের দলিল দাতা হলেও গত ২০ সেপ্টেম্বর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে হফলনামায় সবুজ আহমদের নামে ৪৭২/২০১৯ দলিলটি সম্পাদন করেননি বলে এফিডেভিট করেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সবুজ আহমদ সিলেট সদরের সহকারী ভূমি কমিশনার আশিক মাহমুদ ও সার্ভেয়ার-তহশিলদার, দলিল লেখক নিজামুল ইসলাম রাশেদুজ্জামানসহ অন্যান্যরা লতিবুর রহমানের ভূমি দখলে প্রস্তুত।
তিনি জালিয়াত চক্রটিকে গ্রেপ্তার করে তাদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি জানিয়ে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইজিপিসহ সিলেটের প্রশাসনের কাছে ন্যায়-বিচারের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় হত্যাকাণ্ড বা জমি দখলের মতো ঘটনা ঘটলে সংলিশ্লরা দায়ী থাকবেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বারখলা গ্রামের মিছবা রহমান, মো. জুনেদ আহমদ, জয়নাল মিয়া, লয়েছ মিয়া, রিমন মিয়া, জহির মিয়া, দুলাল মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।