অকালপ্রয়াত যুব রাজনীতিবিদ, যুব ইউনিয়নের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মইনুদ্দিন আহমদ জালালের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা বলেছেন, ‘জীবদ্দশায় সাহসী, বিনয়ী যুব রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত মইনুদ্দিন আহমদ জালাল ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত এক কর্মী।’
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মইনুদ্দিন আহমদ জালাল মৃত্যুবার্ষিকী পালন কমিটির আয়োজনে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্মরণসভার আগে প্রয়াত যুবনেতার অস্থায়ী প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে যুবনেতা জালালের সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্মরণসভায় মঈনুদ্দিন আহমদ জালালকে স্মরণ করে সংগীত পরিবেশন করে নগরনাট।
এ সময় বক্তারা বলেন, অসাধারণ বিনয়ী এবং পরোপকারী মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন সবার কাছে সমাদৃত। মৌলবাদ সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও মানব মুক্তির সংগ্রামে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন নিজেকে।
বক্তারা আরও বলেন, জালাল পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সাম্রাজবাদ ও পুঁজিবাদ বিরোধী আন্দোলনে ছিলেন অগ্রণী মুখ। মানুষের সকল বিপদে জালাল এগিয়ে যেতেন। মানুষ উপকার করতেই তার ছিল সব আনন্দ। জালালের এই শূন্যস্থান পূরণ সহজ হবে না। তবে তার চেতনাকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
পরে এবারই প্রথম প্রবর্তন করা ’জালাল অন্তর’ আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয় প্রগতিশীল প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যরিস্টার আরশ আলীকে।
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন, গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিস্টার আরশ আলী।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ হাসান প্রান্তিক ও আহ্বায়ক মনীষা ওয়াহিদের পরিচালনায় বক্তব্য দেন, মইনুদ্দিন আহমদ জালালের স্ত্রী ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী, যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল হক, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম, পিপি অ্যাডভোকেট রাজ উদ্দিন, কবি তুষার কর, শুভেন্দু ইমাম, জেলা কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুর রহমান, শাবিপ্রবির সহযোগী অধ্যাপক কাজী সিফুল আসফিয়া, সিপিবি সিলেট জেলার সভাপতি সৈয়দ ফরহাদ হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টি সিলেট জেলার সভাপতি কমরেড সিকান্দর আলী, বাসদ জেলা সমন্বয়ক আবু জাফর, বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার আহ্বায়ক উজ্জ্বল রায়, গণতন্ত্রী পার্টি জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গুলজার আহমদ, সাম্যবাদী আন্দোলন সিলেট জেলার সমন্বয়ক সুশান্ত সিনহা সুমন, হাওর ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশ্মীর রেজা, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সিলেট জেলার সভাপতি এনায়েত হাসান মানিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক সৈয়দ মনির হেলাল, কলামিস্ট আব্দুল হক, এনামুল মুনির, প্রগতি লেখক সহসভাপতি মাধর রায়, সিলেট চেম্বারের সাবেক পরিচালক মুকির হোসেন চৌধুরী, যুব ইউনিয়নের প্রেসিডিয়াম সদস্য পিনাক দেব, সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন দাস খোকন, ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলার কোষাধ্যক্ষ সন্দীপ দাস, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা হাছান বক্ত চৌধুরী কাওছার প্রমুখ।
এর আগে সকালে মইনুদ্দিন আহমদ জালালের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ধরাধরপুরে পারিবারিকভাবে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। পরে দুপুরে প্রগতিশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ধরাধরপুর পারিবারিক কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। একই দিন তার পৈত্রিক নিবাস সুনামগঞ্জেও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
অকালপ্রয়াত যুব রাজনীতিবিদ, যুব ইউনিয়নের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মইনুদ্দিন আহমদ জালাল ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর ভারতের শিলং সফরে গিয়ে আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি ছিলেন বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিলেট জেলা সংসদের সাবেক সভাপতি এবং আন্তর্জাতিক নদী অধিকারবিষয়ক সংগঠন অঙ্গীকার বাংলাদেশের পরিচালক ছিলেন। আইনপেশায় তিনি সিলেট ও সুনামগঞ্জ বারের সদস্য ছিলেন। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যুব-আন্দোলনেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন।