দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ও নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকার ঘোষণা আসলেও ভোটের মাঠে নেমেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সাবেক এমপি এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজাম।
তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সদস্য।
গত মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রামগতি উপজেলার রামদয়াল এলাকায় নিজ বাসভবনে শ্রমিক সমাবেশে নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করে নেতাকর্মীদের ভোটের মাঠে নামার আহ্বান জানান তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রামগতি পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা শাহেদ আলী পটু ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জামাল হোসেনসহ অনেকে।
ইতোমধ্যে তার বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
বক্তব্যের শুরুতে আশরাফ উদ্দিন নিজাম বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া ভোটে যাবে না বললেও সরকার হটিয়ে নির্বাচনে যেতে পারে বিএনপি। এ জন্য আন্দোলনের পাশাপাশি ভোটের মাঠে থাকতে হবে নেতাকর্মীদের। আমি লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আছি। আপনারা আমার জন্য কাজ করুন।’
তবে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সমালোচনা করেছেন আশরাফ উদ্দিন নিজাম। তিনি বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, সুলতান মনসুর ও আ স ম আবদুর রব-রা তো আওয়ামী লীগেরই লোক, কেউ বিএনপির না। ১৯৮৬ সালে বিএনপি নির্বাচন করেনি কিন্তু আ স ম আবদুর রব ভোট করেছেন এবং এরশাদের গৃহপালিত বিরোধী দল হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে বিএনপি কয়েকটি আসনের জন্য সরকার গঠন করতে পারেনি। তখন শেখ হাসিনার সঙ্গে জোটভুক্ত হয়েছেন আ স ম রব। কাজেই এ ধরনের লোকদের আমরা গ্রহণ করা তো দূরের কথা, আশপাশেও জায়গা দেবো না। আমার সঙ্গে এখানে ভোটে দাঁড়িয়ে তার তো জামানতই বাতিল হয়ে গিয়েছিল।’
আ স ম আবদুর রবকে উদ্দেশ্যে করে আশরাফ উদ্দিন নিজাম বলেন, ‘আপনি শুনে রাখেন, আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়ে গেছি—ইনশাআল্লাহ। এই শ্রমিক সমাবেশ থেকে বলে দিলাম, নির্বাচনে দাঁড়িয়ে গেলাম। এই বক্তব্য প্রত্যেকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের (উপস্থিত নেতাকর্মীদের)।’
আমাদের আন্দোলনের প্রস্তুতি যেমনই থাকবে, ভোটের প্রস্তুতিও তেমনই থাকবে উল্লেখ করে বিএনপির সাবেক এই এমপি বলেন, ‘কারণ হঠাৎ করে ভোট করা যায় না। আপনারা মনে করেন, মানুষ এমনিতেই ভোট দিয়ে দেবে? না। ভোটের একটা কারিশমা আছে। আমি তো একজন প্রার্থী, গত আট বছর কেন্দ্রে যেতে পারিনি। কাজেই আন্দোলনে যেমনই সক্রিয় আছি, তেমনই আমাদের আরও বেশি করে ভোটের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যেন শেখ হাসিনার পতন হলে কিংবা রিজাইন করলে আমরা কাউকে না বলে ভোটে নেমে যেতে পারি। কারণ লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে আমি একমাত্র প্রার্থী। এখানে দলের আর কোনও প্রার্থী নেই।’
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই বক্তব্য আমার দেওয়া। শ্রমিক সমাবেশ থেকে ভোটের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছি।’
এদিকে, দলীয় সিদ্ধান্তের আগেই ভোটের মাঠে নামার ঘোষণা দেওয়ায় আশরাফ উদ্দিন নিজামকে নিয়ে সমালোচনা করছেন দলের নেতারা। তবে কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি লক্ষ্মীপুর বিএনপির কেউ।