পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করা বিভিন্ন রুটের লঞ্চের যাত্রী কমেছে। যাত্রী টানতে কমানো হয়েছে ভাড়া। এছাড়া কমেছে লঞ্চের সংখ্যাও। চিরচেনা ব্যস্ত সদরঘাট টার্মিনালের চেহারাটাই যেন বদলে গেছে এ কয়েকদিনে।
শুক্রবার (১ জুলাই) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি যাত্রী কমেছে ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-ঝালকাঠি, ঢাকা-ভান্ডারিয়া, ঢাকা-বরগুনা, ঢাকা-ভোলা, ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে।
এসব রুটের অনেক লঞ্চের ডেকে আগে ভাড়া ৩০০-৩৫০ টাকা নেওয়া হলেও এখন ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ছিল আগে ১২০০-১৪০০ টাকা, ডাবল কেবিনের ২২০০-২৪০০ টাকা। এখন সিঙ্গেলের ভাড়া ৮০০ টাকা এবং ডাবলের ভাড়া ১৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এতেও আশানুরূপ সাড়া মিলছে না বলে জানিয়েছেন লঞ্চের কর্মচারীরা।
লঞ্চঘাটে স্থাপিত টিকিট কাউন্টারগুলোর অন্তত পাঁচ জন কর্মচারী জানান, এক সপ্তাহ আগেও যে পরিমাণ ঘাট-টিকিট বিক্রি হয়েছে, এখন তা অর্ধেকে নেমেছে। এখন ঘাটে প্রবেশের জন্য ভিড় নেই।
সুরভী-৯, সুন্দরবন-১১ ও এমভি ফারহান-৯ এর একাধিক কেবিন-বয় ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই প্রায় সকল লঞ্চের ভাড়া কমানো হয়েছে। ডেকের ভাড়া ১০০-১৫০ টাকা এবং সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ৪০০-৬০০ টাকা এবং ডাবল কেবিনের ভাড়া ৬০০-৮০০ টাকা কম নেওয়া হচ্ছে।
ছুটির দিনগুলোয় সাধারণত লঞ্চের যাত্রী বেশি থাকলেও শুক্রবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সারি সারি লঞ্চ ঘাটে নোঙ্গর করা। যাত্রী তুলতে হাঁক-ডাক দিচ্ছেন লঞ্চগুলোর লোকজন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন ঢাকা-বরিশালসহ ওই অঞ্চলের রুটগুলোর লঞ্চে উভয় প্রান্তেই খালি থাকছে ৫০-৬৫ শতাংশ কেবিন। নদী বন্দরের শুল্ক প্রহরীরা জানান, গত কয়েক দিনে যাত্রী সংকটে বেশ কয়েকটি লঞ্চ তাদের যাত্রা বাতিল করেছে।
মালিক পক্ষ বলছে, লঞ্চের যাত্রী আগের অবস্থায় হয়তো কখনোই ফিরবে না। তবে কিছুটা উন্নতি হতে পারে। পদ্মা সেতু নতুন চালু হয়েছে বলে অনেকেই সেতু দেখতে সড়ক পথে যাচ্ছেন উৎসাহ নিয়ে। মাস ছয়েক পর অবস্থার উন্নতি হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, আমাদের গর্বের পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চের যাত্রী তিন ভাগের দুই ভাগই কমেছে। তবে আমরা আশা করছি, ধীরে ধীরে যাত্রী বাড়বে। সে জন্য সেবার ক্ষেত্রে ভিন্নতা আনার চিন্তাভাবনা চলছে।
তিনি আরও বলেন, যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ায় লঞ্চগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। অনেকে ভাড়া কমিয়ে লঞ্চ চালু রাখার চেষ্টা করছে। আসন্ন ঈদুল আজহার জন্য কিছু লঞ্চ মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। ঈদের অন্তত দুই মাস পর বোঝা যাবে লঞ্চযাত্রী কতটা কমেছে।