বাংলাদেশিদের কাছে স্বপ্নের দেশ যুক্তরাজ্য। বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশটিতে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশির বসবাস। বৈধ-অবৈধ মিলে এই সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ।
একটা সময় কাজের সংস্থান ও পরিবারের সঙ্গে বসবাসের জন্য দেশটিতে বাংলাদেশিরা পাড়ি জমালেও গত কয়েক বছরে ভ্রমণকারীর সংখ্যা বেড়েছে। ভিসা প্রসেসিং কঠিন হলেও প্রতি বছর শত শত ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী, রাজনীতিবিদসহ নানা পেশার মানুষ ভ্রমণ ভিসায় দেশটিতে আসছেন। হাতে গোনা কিছু সংখ্যক ছাড়া অধিকাংশই ভ্রমণ শেষে ফিরছেন মাতৃভূমিতে।
এদিকে যুক্তরাজ্য সরকার চলতি বছর থেকে ভ্রমণকারীদের সুসংবাদ দিচ্ছে। দেশটি ভিসা প্রসেসিং এর সময় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই যুক্তরাজ্যের ভিজিট ভিসা পাবেন ভ্রমণকারীরা।
সুনামগঞ্জের আবুল আহসান শিহাব অক্টোবর মাসে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন ভিজিট ভিসায়। মাসখানেক ঘুরে ফিরে গেছেন দেশে। তিনি বলেন, আমার ভাই, বোন তিনজন বসবাস করেন যুক্তরাজ্যে। যুক্তরাজ্য ভ্রমণের সময় ভাতিজির বিয়েতে অংশগ্রহণসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা হয়েছে। অসম্ভব সুন্দর দেশ। এই দেশের বিভিন্ন শহরের দর্শনীয় স্থানে ঘুরেছি। মানুষজন খুবই আন্তরিক। সবচেয়ে বড় বিষয় প্রযুক্তি। মোবাইলে নেট থাকলে এখানে সবকিছু হাতের মুঠোয়। সব শহরেই কম-বেশি বাংলাদেশের বিশেষ করে সিলেটের মানুষ পাওয়া যায়।
সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক ইকবাল মাহমুদ বলেন, ব্রিটেন সফরের অভিজ্ঞতা অসাধারণ। ব্রিটেনের উন্নত জীবনযাত্রা, চাকচিক্যময় স্থাপত্য, আলো ঝলমলে নাগরিক জীবন ছাপিয়ে সবচেয়ে বেশি আমাকে পুলকিত করেছে বিশাল বাংলাদেশি কমিউনিটি। সত্যি কথা বলতে, ২১ দিনের ব্রিটেন সফরে আমি দেশকে খুব একটা মিস করিনি। আমার মনেই হয়নি আমি বাংলাদেশের বাইরে আছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশিরা সেখানে ব্রিটিশ সংস্কৃতির সমান্তরালে বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও জীবনাচারের একটা সমৃদ্ধ ঐতিহ্য নির্মাণ করে চলেছেন। ফলে এখানকার কমিউনিটিতে পারস্পরিক মায়া-মমতা, স্নেহ-প্রীতি, সহানুভূতি খুবই প্রখর। বাংলাদেশের মতোই এখানকার লোকজন খুবই অতিথিপরায়ণ, হেল্পফুল। ব্রিটেনের বিস্ময়কর অগ্রগতির অন্যতম দিক এর যোগাযোগের নেটওয়ার্ক। প্রায় পুরো ব্রিটেনই রেল যোগাযোগে সংযুক্ত। তবে ফ্রিকোয়েন্ট যোগাযোগে খরচ কিছুটা বেশি।
লন্ডনের বাসিন্দা মুসলেহ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ থেকে এলে ভ্রমণকারীদের হোটেল, মোটেলে থাকার চিন্তা করতে হয় না। যাতায়াতের চিন্তা করতে হয় না। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের বাসায় থাকা যায়। বিমান ভাড়া ছাড়া অন্য কোনো খরচের চিন্তাও করতে হয় না। আমরা এই দেশে বসবাসকারীরাও তাদের সময় দেই। যা অন্য দেশে গেলে হয়তো পাওয়া যাবে না।
লন্ডনের ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ বলেন, ২০২৩ সালের প্রথম দিক থেকে ব্রিটিশ সরকার ভিজিট ভিসার প্রসেসিং সময় তড়িৎ করার উদ্যোগ নিয়েছে। তারা নতুন স্কিম চালু করছে। ভিসা প্রসেসিং এর এপ্লিকেশন থেকে ভিসা দেয়া পর্যন্ত দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। রিফিউজ হলে রিফিউজ, গ্রান্ট হলে গ্রান্ট। এর মানে হলো, আবেদনকারীর সিদ্ধান্ত পেতে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবেদনের সিদ্ধান্ত পাঁচদিনের মধ্যে জানাবে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ এবং এতে আবেদনকারীরা উপকৃত হবেন।