ভারতজুড়ে বিক্ষোভ-অগ্নিসংযোগ, বহু হতাহত

সামরিক বাহিনীতে নিয়োগে নতুন প্রকল্পের প্রতিবাদে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। দেশের বিভিন্ন প্রদেশে ট্রেনে আগুন দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে, বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। যদিও সেনা নিয়োগের এই প্রকল্পটিকে ‘রূপান্তরমূলক’ বলে অভিহিত করেছে সরকার।

সম্প্রতি চুক্তিভিত্তিক মেয়াদে সেনা সদস্য নিয়োগের জন্য অগ্নিপথ নামে প্রকল্পের প্রস্তাব দেয় সরকার। প্রকল্পে গ্র্যাচুইটি ও পেনশন সুবিধা ছাড়াই বাধ্যতামূলক অবসরের নিয়ম রাখা হয়েছে। এরপরই এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। চার বছর সেনা সদস্য হিসেবে চাকরির পর তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, এসব জানতে চেয়ে বিক্ষোভ শুরু করে জনতা।

এনডিটিভি বলছে, বুধবার (১৫ জুন) থেকে দেশজুড়ে অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। শুক্রবার (১৭ জুন) তৃতীয় দিনে গড়াল এই আন্দোলন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় তেলেঙ্গানার সেকেন্দ্রাবাদে একজন মারা গেছেন। ১৫ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। নতুন প্রকল্প নিয়ে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও মধ্যপ্রদেশের মতো বেশ কয়েকটি রাজ্যে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

রেলওয়ের মতে, বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ২০০টির বেশি ট্রেনে করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। নিয়মিত চলাচল করা ৩৫টি ট্রেন সেবা বাতিল করা হয়েছে।

বিহারে পশ্চিম চম্পারন জেলার বেত্তিয়ায় উপ-মুখ্যমন্ত্রী রেনু দেবীর বাড়িতে হামলা হয়েছে, আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রতিক্রিয়ায় রেনু দেবী বলেন, এই ধরনের সহিংসতা সমাজের জন্য খুবই বিপজ্জনক। প্রতিবাদকারীদের মনে রাখা উচিত, এটি সমাজের জন্য ক্ষতি।

শুক্রবার সকালে উত্তরপ্রদেশের বালিয়ায় একটি রেলস্টেশনে প্রবেশ করে উত্তেজিত জনতা। তারা একটি ট্রেনের কোচে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য বল প্রয়োগ করার আগে রেলওয়ে স্টেশনের সম্পত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

গত মঙ্গলবার অগ্নিপথ প্রকল্পের ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। প্রকল্পে ১৭ থেকে ২১ বছরের তরুণ তরুণীরা চার বছরের জন্য মাসিক ৩০-৪৫ হাজার টাকার চুক্তির ভিত্তিতে সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখায় (স্থল, নৌ এবং বায়ুসেনা) যোগ দিতে পারবেন। তাদের বলা হবে ‘অগ্নিবীর’।

সেনা বাহিনীতে শূন্যপদ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চতুর্থ বছরের শেষে সেই ব্যাচের সর্বাধিক ২৫ শতাংশ অগ্নিবীরকে সেনা বাহিনীতে স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বাকিদের ১১-১২ লক্ষ টাকা হাতে দিয়ে পাঠানো হবে অবসরে, থাকবে না কোনো পেনশন।

এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও। অগ্নিপথে হাঁটার মাধ্যমে ধৈর্যের ‘অগ্নিপরীক্ষা (আগুনের মাধ্যমে বিচার)’ না নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আহ্বান জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এদিকে সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব এই পদক্ষেপকে ‘অবহেলা’ ও দেশের ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাব্য ‘মারাত্মক’ বলে অভিহিত করেছেন।

বিক্ষোভের পরে অগ্নিপথ নিয়োগের বয়সসীমা এখন ২১ থেকে ২৩-এ উন্নীত করা হয়েছে। শীর্ষ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা তরুণদের আশ্বস্ত করেছেন, নতুন নীতি তাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে।

এক টুইট বার্তায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া গত দুই বছর ধরে প্রভাবিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের যুবকদের জন্য উদ্বেগ দেখিয়ে একটি সংবেদনশীল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সেনা প্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডে বলেছেন, এককালীন মওকুফ মঞ্জুর করার জন্য সরকারের সিদ্ধান্তটি সেনাবাহিনী পেয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। সেনাপ্রধান যুবকদেরও ‍‍`অগ্নিবীর‍‍` হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগদানের সুযোগ নিতে আহ্বান জানান।