ভারতের গুজরাট রাজ্য আর পাকিস্তানের করাচি উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’। আগামী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ এটি উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে দেশ দুটি।
বিপর্যয়ের আঘাত ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে নেওয়া হচ্ছে ব্যাপক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। এরই অংশ হিসেবে ভারতের গুজরাটের উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৩৮ হাজার মানুষকে ইতোমধ্যেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৪ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। অন্যদিকে উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে পাকিস্তানও।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের গুজরাটের সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছ অঞ্চল এবং দক্ষিণ পাকিস্তানের করাচি উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে পোরবন্দর থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে পূর্ব-মধ্য আরব সাগরে অবস্থান করছে।
এদিকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের আগে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ৩৭ হাজার ৮০০ লোককে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করেছে গুজরাটের কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার এই ঘূর্ণিঝড়টি কচ্ছ জেলার জাখাউ বন্দরের কাছে স্থলভাগে আছড়ে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
এনডিটিভি বলছে, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে ভার্চুয়াল বৈঠকে ঘূর্ণিঝড়ের আগে গুজরাটের প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেছেন।
এসময় অমিত শাহ রাজ্য সরকারকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী লোকেদের নিরাপদ স্থানে সরানোর ব্যবস্থা করতে এবং এই অঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা এবং খাবার পানীয়সহ সমস্ত প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো চালু রাখা নিশ্চিত করতে বলেন।
মঙ্গলবার গুজরাট রাজ্যের ত্রাণ কমিশনার অলোক কুমার পান্ডে বলেছেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই উপকূলের কাছাকাছি বসবাসকারী লোকদের সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছি। কারণ ভূমিধসের সময় তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা প্রশাসন প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে অস্থায়ী আশ্রয়ে স্থানান্তরিত করেছে।’
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের গুজরাট রাজ্যের মান্দভি এবং দক্ষিণ পাকিস্তানের করাচি উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা এই ঝড়ের বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১২৫ থেকে ১৩৫ কিলোমিটার হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন।
তবে আঘাত হানার সময় ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তারা।
এদিকে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর গুজরাটের সৌরাষ্ট্র-কচ্ছ অঞ্চলের উপকূলীয় অংশে প্রবল বাতাসের সাথে অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে। বিশেষ করে কচ্ছ, পোরবন্দর এবং দেবভূমি দ্বারকা জেলার জন্য এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ১৫-১৭ জুন পর্যন্ত উত্তর গুজরাটে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে।
এনডিটিভি বলছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় আঘাত হানার আগে দুই ধাপে চলছে উদ্ধারকাজ। প্রথম পর্যায়ে সমুদ্র উপকূলের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে, উপকূলের ৫ থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী লোকদের সরিয়ে নেওয়া হবে।
এছাড়া ট্রেন যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ভারতের পশ্চিম রেলওয়ে। ফলে ৬৯টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে এবং ৩২টি ট্রেনের গন্তব্যস্থল তথা যাত্রাপথ কমিয়ে আনা হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে বাঁচাতে উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে পাকিস্তানও। দেশটির সিন্ধ প্রদেশের করাচির উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে ইতোমধ্যেই ১ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফ এর বেশ কয়েকটি দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ভারতীয় সেনাবাহিনীও ত্রাণ প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে এবং কৌশলগত বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ মজুদও করেছে। একইসঙ্গে বেসামরিক প্রশাসন এবং এনডিআরএফের সাথে নিজের পরিকল্পনাগুলোর সমন্বয় করছে সেনাবাহিনী।
সিলেট ভয়েস/এএইচএম