সিলেটের বিশ্বনাথে জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে পিতৃপরিচয় দিয়ে ৬৫ বছরের বৃদ্ধের সঙ্গে প্রতারণা করছেন মাহবুবুল আলম জনি (৪০) নামে এক যুবক। মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে পিতৃপরিচয় দেওয়ায় সামাজিকভাবে হয়রানী ও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে ওই বৃদ্ধকে। এমনকি প্রতারক যুবকের সকল অপকর্মের জন্য আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বেলা ২টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে নিজের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এমন প্রতারণার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগী বৃদ্ধ মো. আব্দুল খালিক। তিনি বিশ্বনাথ উপজেলার একাভীম (গহরপুর) গ্রামের মৃত সোনা উল্লার ছেলে। সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল খালিকের পক্ষে লিখিত বক্তব্য রাখেন তার ছোট মেয়ে সাহেলা বেগম।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী আব্দুল খালিক বলেন, তাঁর একই গ্রামে পিতা-মাতার পরিচয়হীন যুবক মো. মাহবুবুল আলম জনি বসবাস করেন। জালিয়াতির মাধ্যমে জনি তার জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতার নাম হিসেবে আব্দুল খালিক লিখেছে। এটা কেউ জানতো না। ২০২২ সালে জনি একটি মামলার আসামী হলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। মামলার তদন্তে পুলিশ এলাকায় গেলেই তার বাড়িতে চলে যায়। এতে চরম হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে তাকে।
আব্দুল খালিক আরও বলেন, তার গ্রামে আব্দুল খালিক নামে কোনো ব্যক্তি নেই। একমাত্র তিনিই আব্দুল খালিক নামে পরিচিত। তার একমাত্র স্ত্রী সোনারা বেগম ও তিন সন্তান ছাড়া আর কেউ নেই। কিন্তু প্রতারণার মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে তাকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। জনি বিভিন্ন মামলা ও দলিলপত্রে পিতা আব্দুল খালিক বলে লিপিবদ্ধ করছে। এতে করে সামাজিকভাবে তিনি বেশ অপমানিত হচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল খালিক বলেন, জালিয়াতি করে ভ‚মি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে জনির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে এবং একাধিকবার জেলও খেটেছে সে। জনির স্ত্রী রফনা বেগমের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। সম্প্রতি আমাকে তার (জনির) পিতা পরিচয় দিয়ে একটি জাল দলিল তৈরি করে অন্যের ভ‚মি আত্মসাতের চেষ্টা করছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা-মোকদমাও হয়েছে।
আব্দুল খালিক আরও বলেন, মাহবুবুল আলম জনি নিজেকে (আমি) আব্দুল খালিকের পুত্র পরিচয় দিয়ে ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতে একটি সিআর মামলা করে। যার নং-২৪৭/২০২৩। তদন্তে মামলাটি মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় আদালত তা খারিজ করে দেন। এই মামলার বিবাদী আশরাফুজ্জামান আইজ্যাক পরবতীতে জনির বিরুদ্ধে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি জিআর মামলা করেন। মামলা নং জিআর ১১৮/২০২৪। মামলায় দেওয়া তথ্যে আমাকে (আব্দুল খালিককে) জনির পিতা উল্লেখ করা হয়। এতে করে সমাজে তাকে নিয়ে বিভেদ ছড়িয়ে পড়েছে।
আব্দুল খালিক বলেন, জনির প্রতারণার কারণে ভবিষ্যতে তার স্ত্রী সন্তানরা উত্তরাধিকার নিয়েও নানা আইনী জটিলতার মধ্যে পড়বে। সন্তান না হয়েও পিতা দাবি করে জনি ও তার কথিত মাতা হেনা বেগম উত্তারধিকারী সেজে সম্পত্তিতে অংশীদারিত্ব দাবি করতে পারে। এজন্য তিনি সম্প্রতি এফিডেভিট করে ঘোষণা দিয়েছেন-জনি তার কোনো সন্তান নয়।
সংবাদ সম্মেলনে মাহবুবুল আলম জনির জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিলসহ মিথ্যা পিতৃপরিচয়ের জন্য তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবি জানান ভুক্তভোগী আব্দুল খালিক। এসময় উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী সোনারা বেগম, মেয়ে রাহেলা বেগম, সাহেলা বেগম ও ছেলে আব্দুল মবিন কিবরিয়া।