গেল আসরে অনেকটা তরুণ দল নিয়েই বিশ্বকাপ জিতে গিয়েছিল ফ্রান্স। সেই দলে এবার যোগ হয়েছিলেন কারিম বেনজেমাদের মতো ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থাকা তারকা। আগের বার যিনি ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জেতায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন, সেই কিলিয়ান এমবাপেও এখন আরও ঋদ্ধ, আরও শাণিত। সব মিলিয়ে ফ্রান্সকেই এবারের অন্যতম হট ফেভারিট হিসেবে ধরা হচ্ছিল।
তবে বিশ্বকাপ শুরুর একটু আগে এখন দেখা যাচ্ছে, ফ্রান্সের স্কোয়াড যেন বেহুলার বাসর! তাতে একটা গুঞ্জনও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে আবার। ‘চ্যাম্পিয়নের অভিশাপ’ কি পেয়েই বসেছে ল্য ব্লুজদের?
ফ্রান্সের চোটের টাইমলাইনটা দেখুন। আগের বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পল পগবা হাঁটুতে চোট পেলেন মৌসুম শুরুর আগে, লাগল অস্ত্রোপচার; এই চোট সারিয়ে ফিরেই উরুর পেশিতে চোট পেলেন, সেই চোট আর মাঠেই নামতে দিলো না তাকে। এরপর পালা এলো এনগোলো কন্তের। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট নিয়ে তিনিও চলে গেলেন দল থেকে দূরে।
চলতি মৌসুমে ক্রিস্তোফার এনকুকু দারুণ খেলছিলেন, রাজেন বলস্পোর্ত লাইপজিগের হয়ে ২৩ ম্যাচে করেছিলেন ১৭ গোল, করিয়েছিলেন ৪টি। এমন ফর্মের কারণে ফ্রান্স দলের এবারের এমবাপেও ধরা হচ্ছিল তাকে। কিন্তু গত ১৫ নভেম্বর লিগামেন্টের চোট তাকেও বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ডেরা থেকে কেড়ে নেয়।
এরপর বেনজেমার পালা। পেশির সমস্যা নিয়ে তিনিও ছিলেন খানিকটা অস্বস্তিতে। যে কারণে গত রাতে প্রথম বারের মতো নেমেছিলেন অনুশীলনে। সেখানেই বাঁধল বিপত্তি। বাম হিপ ফ্লেক্সরে চোট বিশ্বকাপটাই শেষ করে দেয় তার।
২০১৪ সালের বিশ্বকাপে বেনজেমাই ছিলেন ফ্রান্সের সর্বোচ্চ গোলদাতা। কিন্তু পরের বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন দল থেকে ‘নির্বাসনে’, সতীর্থ ম্যাথিউ ভ্যালবুয়েনার সঙ্গে ‘সেক্সটেপ’ কেলেঙ্কারি তার জাতীয় দলের ক্যারিয়ার থেকে কেড়ে নেয় পাঁচটি বছর। সেই নির্বাসন কাটিয়ে তিনি দলকে জিতিয়েছিলেন উয়েফা নেশন্স লিগ শিরোপা, ধারণা করা হচ্ছিল বিশ্বকাপটাও বুঝি এবার রাঙাবেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ ‘টালিসমান’। কিন্তু চোট তা আর হতে দিলো কই?
পগবা, কন্তে, এনকুকু’র পর এবার বেনজেমার চোট নতুন এক দুশ্চিন্তা উপহার দিয়েছে কোচ দিদিয়ের দেশমকে। একাদশে নামাবেন কাকে, সুপার সাবই বা বানাবেন কাকে, এ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে তাকে।
ফ্রান্সকে চোখ রাঙানি দিচ্ছে বিশ্বকাপের ‘ইতিহাসও’। চলতি শতাব্দিতে যে কোনো ইউরোপীয় দল বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পরের বিশ্বকাপে এসে গ্রুপ পর্ব পার হতে পারেনি!
২০০২ বিশ্বকাপে ফ্রান্সই শুরু করেছিল এই ‘ট্রেন্ড’, বিদায় নিয়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকে। এরপর ২০১০ এ আগের বারের চ্যাম্পিয়ন ইতালি, ২০১৪ এ স্পেন, ২০১৮ সালে জার্মানি, সব চ্যাম্পিয়নই এই অভিশাপের শিকার হয়েছে। এত্তো এত তারকাদের চোটের পর মনে হচ্ছে, এবার কি তবে ফ্রান্সের পালা?