হাওরের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের চূড়ান্ত বিল না পেয়ে অর্থের কষ্টে ভুগছেন জগন্নাথপুর উপজেলার হাওর পাড়ের কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা। নিয়ম অনুযায়ী ফসল উত্তোলনের পর পর চূড়ান্ত বিল পরিশোধের কথা থাকলেও ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে ফসল উত্তোলনের চার মাস পরও বিল না পেয়ে অর্থ কষ্টে ভুগছেন তাঁরা।
কৃষক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানা গেছে, বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল সুনামগঞ্জের হাওর পাড়ের কৃষকদের ফসল রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে। নিয়ম অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ হওয়ার কথা। চলতি বছর এপ্রিলের শুরুতে আগাম বন্যা দেখা দিলে বেশ কয়েকটি বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে পড়ে। এ সময় বেড়িবাঁধ রক্ষায় জোর তৎপরতা চালান প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির লোকজন। বাঁধ রক্ষায় ধারদেনা করে টাকা খরচ করে কাজ করেন।
হাওরের ফসল রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রনধীর দাস বলেন, ‘নলুয়ার হাওরের ফসল রক্ষায় ১৭ লাখ ৭০ হাজার টাকার একটি প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করে তিন কিস্তিতে ৫৫ ভাগ বিল পেয়েছি। অনেক কষ্টে ধারদেনা করে কাজ শেষ করলেও বিল না পাওয়ায় অর্থ কষ্টে ভুগছি।’
তিনি বলেন, ‘হাওরের ফসল রক্ষায় ঝুঁকিপূর্ণ অন্য একটি প্রকল্প রক্ষায় বিকল্প বেড়িবাঁধ নির্মাণ করি। যার এক টাকাও বিল পাইনি।’
আরেক কমিটির সভাপতি আহমেদ আলী বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী চূড়ান্ত বিল পাওয়ার আগে ৭৫ ভাগ বিল পাওয়ার কথা। বিল পেয়েছি ৫৫ ভাগ। এ ছাড়াও বাঁধ রক্ষায় অতিরিক্ত কাজ করেছি। এখনো কোনো টাকা পাইনি।’
দুই দফা বন্যায় প্রায় সব প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির লোকজন আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে অর্থ কষ্টে ভুগছেন বলে জানান তিনি।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাওরের ফসল রক্ষায় পিআইসি প্রথা (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) থাকায় এবার নলুয়ার হাওরের ফসল রক্ষা পেয়েছে। কৃষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের কাজ হওয়ায় দিনরাত সংস্কার কাজ করে বাঁধ রক্ষা করা হয়। ফসল ওঠার পরও বিল না পাওয়া দুঃখজনক।
এ নিয়ে চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, হাওরের ফসল রক্ষায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির লোকজন এবার অকাল বন্যায় ঝুঁকিতে পড়া পড়া বাঁধ রক্ষায় যে ভূমিকা রাখছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তাদের অনেকেই কাজের টাকা না পেয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ কর্মকর্তা হাসান গাজী বলেন, অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় পিআইসিদের বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, এবার জগন্নাথপুর উপজেলায় ২৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ করা হয়। এপ্রিল ও মে মাসে ফসল উত্তোলনের সময় অকাল বন্যায় ফসল রক্ষায় জরুরি আরও ৬ টি বিকল্প বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। যার জন্য আরও ২৫ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়।