উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার রাজনীতির মাঠ। শেষ সময়ে প্রার্থীদের দিনরাত প্রচারণায় ভোটের মাঠও সরগরম।
আগামী ৫ জুন চতুর্থ দফায় শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৫৬টি কেন্দ্রে ১ লাখ ৪২ হাজার ৭৮৩ জন ভোটারের ভোট দেওয়ার কথা রয়েছে। হেভিওয়েট প্রার্থী ও নির্বাচনী ডামাডোলের হিসেবে জেলার অন্য উপজেলার চেয়ে শান্তিগঞ্জে সবচেয়ে বেশি জমে উঠেছে নির্বাচন।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শান্তিগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন তিনজন। তাঁরা হলেন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম (মোটরসাইকেল), সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপির ছেলে শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাদাত মান্নান অভি (আনারস) এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এড. বুরহান উদ্দিন দোলন (ঘোড়া)। তাঁরা সবাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, মোশাররফ হোসেন (মাইক), রুকনুজ্জামান রুকন (চশমা), আনোয়ার হোসেন (তালা) এবং জাহাঙ্গীর খান (টিউবওয়েল)। ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে একজন ছাড়া অন্য সবাই আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দুলন রানী তালুকদার (পদ্মফুল), রফিকা মহির (ফুটবল) খাইরুন নেছা (কলস), নাজমা বেগম (প্রজাপতি) এবং জেসমিন বেগম (হাঁস)।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটাররা বলছেন, কাগজে কলমে তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেও ভোটের মাঠে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আবুল কালাম ও সাদাত মান্নান অভি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী না থাকলেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আজিজুস সামাদ ডনের সমর্থন পাচ্ছেন আবুল কালাম আজাদ। গত শুক্রবার আবুল কালামকে সমর্থন দিয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দিনভর প্রচারণা চালিয়েছেন এই নেতা।
এ বিষয়ে আজিজুস সামাদ ডনের ভাষ্য, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার সমর্থন নিয়ে মান্নান সাহেব এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। অথচ সেই তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অমান্য করে তাঁর ছেলেকে প্রার্থী করেছেন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করার প্রতিবাদেই আমি যোগ্য প্রার্থী হিসাবে আবুল কালামকে সমর্থন দিয়েছি এবং তাঁকে বিজয়ী করেই উচিত জবাব দেবো।’
এছাড়া আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অভিজ্ঞ আবুল কালামের বিশাল কর্মী-সমর্থক রয়েছে এই উপজেলায়। সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বিরোধী বলয়ে থাকা তৃণমূলের জ্যেষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা ও সমর্থকদের ব্যাপক সমর্থনও পাচ্ছেন তিনি।
এদিকে রাজনীতির মাঠে একেবারে নতুন সাদাত মান্নান অভি পাচ্ছেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ মান্নান এমপি বলয়ের সমর্থন। বাবার পরিচয়েই ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন সাদাত মান্নান অভি। এমএ মান্নান পরিকল্পনামন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সমর্থনও রয়েছে তার পক্ষে।
এ দিকে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বোরহান উদ্দিন দোলন উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলে বেশ সাড়া পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। মূলত বিভিন্ন সময়ে সভা-সমাবেশ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এম এ মান্নান এমপির বিরুদ্ধে তীর্যক মন্তব্য করে মান্নান বিরোধীদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছেন তিনি।
সরেজমিন কয়েক দফায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার–ফেস্টুন, মাইকিং আর গণসংযোগ চোখে পড়েছে। উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই ছিল নির্বাচনী আমেজ। জেলার অন্যান্য এলাকার ভোটারদের তুলনায় এ উপজেলার ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে বেশি।
এদিকে নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর বিএনপি সমর্থকদের ভোট। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে বিএনপি নেতারা নির্বাচন বর্জন করলেও স্থানীয় নির্বাচনকে দলগতভাবে দেখছেনা বিএনপি সমর্থকদের বড় একটি অংশ। তাঁরা বলছেন, আমরা বিএনপি সমর্থন করলেও স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় কোনো প্রতীক নেই। তাই ইচ্ছে হলে ভোটে যেতেও পারি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত একাধিক নেতাকর্মী জানান, ‘গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন আমাদের ঘরছাড়া করা হয়েছে। যারা আমাদের উপর এমন নির্যাতন চালিয়েছে তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতেই ‘দলীয় প্রতীক বিহীন’ এই নির্বাচনে ভোটপ্রদান করবেন বলে জানান তারা।
তবে নির্বাচনে তুমুল সাঁড়া পাচ্ছেন বলে জানান সাদাত মান্নান অভি। তিনি বলেন, ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এখন একটি নির্বাচনী সভায় আছি। বিশাল লোকের সমাগম হয়েছে সভায়। আমি আশাবাদী জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে।
তবে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে আবুল কালাম বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে এই উপজেলার মানুষের জন্য কাজ করছি। সুখে-দুঃখে তাদের পাশে রয়েছি। আমি যখন চেয়ারম্যান ছিলাম তখন উন্নয়নের সুষম বণ্টন করেছি। কিন্তু সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয় হাওরবাসীর জন্য পাঠানো নেত্রীর উন্নয়ন কাজ সব এলাকায় না করে শুধুমাত্র তার নিজ গ্রাম ও এর আশপাশে রেখে পুরো উপজেলাবাসীকে উন্নয়ন বঞ্চিত রেখেছেন। যার কারণে মন্ত্রীর এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে সমর্থন করছেন।’
এদিকে, ঘোড়া প্রতিকের প্রার্থী বোরহান উদ্দিন দুলনের মুঠোফোনে একাধিক কল করেও ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।