লোডশেডিংয়ের তীব্রতায় বছর-দেড়েক থেকে দেশে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় বিদ্যুৎ খাত। এ অবস্থার মাঝে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ১১ হাজার ৬১৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
মঙ্গলবার (০৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
নসরুল হামিদ বলেন, ‘২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) মোট লোকসানের পরিমাণ ১১ হাজার ৬১৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
‘এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর-পরবর্তী লোকসানের পরিমাণ ৮ হাজার ৭৭৮ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের লোকসান ২ হাজার ৫৬৩ কোটি, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের লোকসান ২২৬ কোটি ৬৯ লাখ এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির লোকসানের পরিমাণ ৪৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।’
লোকসানের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যয় হয়েছে ১১ দশমিক ০৯ টাকা। আর বিক্রি করা হয়েছে ৫ দশমিক ৭৫ টাকায়। ফলে প্রতি ইউনিটে ৫ দশমিক ৩৪ টাকা লোকসান হয়েছে। এছাড়া ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ৫ দশমিক ২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা নির্ধারণ করায় প্রতি মাসে প্রায় ৮৫০ থেকে ৯০০ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। সে কারণেও বিদ্যুৎ খাতে লোকসানের পরিমাণ বেড়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে দেশে সম্ভাব্য বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা হবে প্রায় ৬০ হাজার মেগাওয়াট। সেক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য খাত হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজন হবে ২৪ হাজার মেগাওয়াট।’
নসরুল হামিদ বলেন, ‘বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চলমান, প্রক্রিয়াধীন ও পরিকল্পনাধীন মোট প্রকল্পের সংখ্যা ১০৮টি। মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে এক হাজার ১৯৫ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য উৎস হতে উৎপাদিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিদ্যুৎ বিভাগ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করছে। প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে ২০৩০ সাল নাগাদ ১০ হাজার ১২৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
তিনি জানান, এডিবির সহায়তায় সোলার ইরিগেশন রোডম্যাপ (২০২৩-৩১) প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। উক্ত রোডম্যাপের আওতায় ৪৫ হাজার ডিজেলচালিত পাম্পকে সৌর বিদ্যুৎচালিত পাম্পে রূপান্তর করা হবে। এর মাধ্যমে প্রায় ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
জাতীয় পার্টির এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়ে থাকে। বর্তমানে চাহিদা প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত গত ১৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে।