মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের প্রতিবাদে বিভিন্ন খাতে তুমুল আন্দোলন চলছে যুক্তরাজ্যে। বর্তমানে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে নার্স এবং অ্যাম্বুলেন্স কর্মীরা। এমন বাস্তবতায় দেশটিতে সরকারি কর্মীরা বিক্ষোভ বন্ধ না করলে বড়দিনের আগে সেনা মোতায়েন হতে পারে।
ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান নাদিম জাহাবি রোববার বলেন, ‘ইউনিয়নগুলোর প্রতি আমাদের একটি বার্তা আছে। সেটি হলো, এখন ধর্মঘটের সময় না। এখন আলোচনা করার সময়। আমরা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের কথা ভাবছি। প্রয়োজনে সেনারা অ্যাম্বুলেন্স চালাবে বলেও জানান কনজার্ভেটিভ বাহিনীর প্রধান।’
শুরু থেকেই বিক্ষোভ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আসছিল ব্রিটিশ সরকার। তাদের ভাষ্য, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বেতন-ভাতা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এখন যদি তা বাড়ানো হয়, তবে মুদ্রাস্ফীতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
যুক্তরাজ্যের খুচরা ইলেকট্রিক্যাল পণ্য বিক্রয়ের কোম্পানি কারিসের প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স ব্যালডক জানান, বিক্ষোভ থেকে দূরে থাকতে তারা পণ্য সরবরাহের জন্য রয়্যাল মেইল ব্যবহার করবে না। রয়্যাল মেইল হলো ব্রিটিশ সরকারের পোস্টাল সার্ভিস; ১৫১৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
চলতি বছর রয়্যাল মেইলের পোস্ট এবং পার্সেল বিভাগের কর্মীরা বেতন-ভাতা ও কাজের শর্তাবলি নিয়ে কয়েক দফা আন্দোলন করে। ডিসেম্বরে আরও বড় পরিসরে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছে তারা।
যুক্তরাজ্যে চলমান অর্থনৈতিক মন্দা আর রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্যুব নেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মন্দা কাটিয়ে না উঠতে পারলে পরবর্তী নির্বাচনে কনজার্ভেটিভ পার্টি ব্যাপক ভরাভুবির মুখে পড়তে পারে।
দ্য সানডে টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষক এবং দমকল বাহিনীর মতো পাবলিক সেক্টরের কর্মীদের আন্দোলনের অধিকার রোধ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সুনাক। নতুন বছরে যদি পরিস্থিতি না ঠিক হয় তবে স্বাস্থ্যকর্মীদের জায়গায় ফার্মাসিস্টদের কাজে লাগাতে পারে ব্রিটিশ সরকার।
চলমান উত্যপ্ত পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সরকারে আসার চেষ্টায় ব্যস্ত দেশটির প্রধান বিরোধীদল-লেবার পার্টি। সংকট নিরসনে তারা সরকারিকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে কনজারভেটিভদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
ব্রিটেনের বিক্ষোভের ঢেউ লেগেছে স্কটল্যান্ডেও। চার দশকের মধ্যে এই দেশটির শিক্ষকরা একটি ভাতার চুক্তি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসেও হাজার হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মীরা বেতন এবং তহবিল নিয়ে বিরোধের জেরে ধর্মঘটে নামবেন কিনা তা নিয়ে ভোট দিচ্ছেন।
যুক্তরাজ্যের এমন পরিস্থিতির জন্য আবারও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দুষেছেন কনজারভেটিভ প্রধান জাহাবি। তার দাবি, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্তরাজ্যে জ্বালানির দাম ও মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে।