রাজধানীতে বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ, উত্তেজনা ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ সমাবেশ ঠেকাতে সরকার গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এখন পর্যন্ত বিএনপির গণসমাবেশ নয়াপল্টনেই করবে বলে অনঢ় দলটির নেতারা। তবে যদি আরামবাগ মাঠে অনুমতি দেয়া হয় সেক্ষেত্রে নয়াপল্টন ছাড়তে রাজি হয়েছে তারা। যদিও নয়াপল্টন এবং আরামবাগে অনুমতি না দেয়ার বিষয়ে অনড় প্রশাসন। এ ঘটনায় নাশকতার আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ায় যুক্তরাজ্য তাদের নাগরিকদের চলাচলে সতর্ক করেছে।
মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় এই সতর্কতা জারি করে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বাংলাদেশ থাকা তাদের নাগরিকদের ঢাকায় চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাজ্য। অন্যদিকে দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেও এখনো ঠিক হয়নি সমাবেশস্থল। তবে সেই সমাবেশকে ঘিরে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ইতোমধ্যেই রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার আবাসিক হোটেলগুলোতেও কড়াকড়ি আরোপ করেছে পুলিশ। এমনকি ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলেও অভিযান চালানো হয়েছে।
যদিও বিএনপির দাবি-সমাবেশ বানচাল করতেই পুলিশ আবাসিক হোটেলগুলোতে অভিযানের নামে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। তবে এটিকে নিয়মিত অভিযানের অংশ বলেই জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে আবাসিক হোটেলগুলোয় কড়াকড়ি আরোপের ফলে গেস্ট আসা কমে গেছে বলে দাবি করেছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে যেসব গেস্ট হোটেলে আছেন, অভিযানের ফলে তাদের মাঝেও চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন তারা।
রাজধানীর গুলিস্তান, ফার্মগেট, পল্টন, ফকিরাপুল, বংশাল, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, শাহবাগ, রমনা, মগবাজার, মৌচাকসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে হোটেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই মিলেছে। তারা জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের শুরু থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে হোটেলগুলোতে বিএনপির সমর্থকদের রুম ভাড়া দেয়া বা হোটেলে উঠাতে নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি যেসব অতিথি রয়েছেন তাদের ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে হোটেলে থেকে চলে যেতে বলা হয়েছে। যদিও ঝামেলা এড়াতে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না কোনো হোটেল কর্তৃপক্ষ।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীর আবাসিক হোটেল-মেসসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান অব্যাহত আছে। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই অভিযান চলবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিএনপির একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি দলীয়ভাবেও ঢাকায় অবস্থান নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। ৯ ডিসেম্বর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে মহাসমাবেশ ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এ সমাবেশে যারা অংশ নেবেন, তাদের একটি অংশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেখে দেয়া হতে পারে। এর বাইরে প্রতিটি ওয়ার্ডেও তাদের অবস্থান থাকবে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বিষয়ে বেশকয়েকটি প্রস্তুতি বৈঠকও হয়েছে। তবে বিএনপির কর্মকাণ্ড, তাদের প্রস্তুতি, লোক জমায়েতের পরিস্থিতি দেখে শেষ মুহূর্তে নতুন কৌশল বা পরিকল্পনাও নেয়া হতে পারে।
১০ ডিসেম্বর যা-ই হোক না কেন এবং যেখানেই সমাবেশ হোক এ বিষয় নিয়ে ঢাকাবাসী এবং সারাদেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা বিএনপির গণসমাবেশে স্বাভাবিকভাবেই উপস্থিতি কমিয়ে দিতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
এদিকে ঢাকায় সমাবেশ করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা বিএনপির। তাদের লক্ষ্য বড় জমায়েত করা। এর মাধ্যমে বিএনপি এটা প্রমাণ করতে চায় যে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নেই, বিএনপি এখন দেশের জনপ্রিয় দল। নয়াপল্টনে বিএনপি সমাবেশ করার ক্ষেত্রে অনড় থাকলে আওয়ামী লীগ ও সরকারের কৌশল কী হবে, এনিয়েও নানা আলোচনা চলছে। সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৯ ডিসেম্বর থেকে নয়াপল্টনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেবে।