রাজধানীতে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে ২৭৫ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর ঢাকায় মোট রোগীর সংখ্যা ২০৪ জন। তাদের তথ্য অনুযায়ী, এ মাসের প্রথম ৮ দিনে মোট ১ হাজার ৭৭০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন ১০ জন। চলতি বছর মোট মৃত্যু ৩১ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের এপ্রিলে রোগী ছিল ২৩ জন, মে-তে ১৬৩ জন, জুনে ৭৩৭ জন এবং জুলাইতে ১৫৭১ জন।
আগামী মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন কীটতত্ত্ববিদরা। তাদের মতে, চলতি মাসে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় ডেঙ্গুর মৌসুম নভেম্বর পর্যন্ত বাড়তে পারে। তারা রোগীদের ঠিকানা নিয়ে ওইসব এলাকায় মশক নিধনের পরামর্শ দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টি এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য সহায়ক। এ বছর বর্ষার শুরু থেকে বেশি বৃষ্টিপাত হয়নি। থেমে থেমেই হয়েছে, যা বংশবৃদ্ধির জন্য অনুকূলে ছিল। আর তাতেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ।
কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, সামান্য বৃষ্টিপাত এডিস মশার প্রজননের জন্য উপযোগী। কোথাও যদি এক সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয় বা কোনও একটা পাত্রে পানি জমার মতো বৃষ্টিপাত হয়, তাতেই যথেষ্ট।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক আরও বলেন, বৃষ্টি না হলেও ঢাকা শহরে এডিস মশা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের বহুতল ভবন। সেখানে পার্কিংয়ের জায়গায় গাড়ি ধোয়া হয়। এই পানি নিষ্কাশন ঠিকভাবে হয় না। কোথাও না কোথাও জমা হয়। এসব জায়গায় এখন প্রচুর এডিস মশা পাওয়া যায়। এছাড়া মানুষ কিন্তু মগ-বালতিতে পানি জমিয়ে রাখে। এছাড়া নগরায়ণের ধরন পরিবর্তনের সঙ্গে এডিস মশাও তার অভিযোজন শক্তি বৃদ্ধি করেছে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু সেপ্টেম্বরের শেষেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে সেহেতু দীর্ঘ হতে পারে ডেঙ্গু মৌসুম। আগে মে থেকে অক্টোবর ঝুঁকিপূর্ণ সময় ধরা হলেও এখন নভেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
কবিরুল বাশার বলেন, সিটি করপোরেশনের উচিত ডেঙ্গু রোগীর তালিকা সংগ্রহ করে হটস্পট ব্যবস্থাপনা করা। হটস্পট হলো ডেঙ্গু রোগীর বসবাসের এলাকা। সিটি করপোরেশনের উচিত রোগীর বাসার ৫০০ গজের মধ্যে কীটনাশক স্প্রে করে মশা মেরে ফেলা, যাতে অন্যদের কামড়াতে না পারে।
কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, রোগীর সংখ্যা বাড়াটা খুবই উদ্বেগজনক। এখন আমাদের জানা দরকার রোগীর মধ্যে নতুন সেরোটাইপের আছে কিনা। কারণ, যার এক ধরনের সেরোটাইপের ডেঙ্গু হয়েছে সে যদি অন্য সেরোটাইপে আক্রান্ত হয় তা খুবই ভয়ংকর।
তিনি আর ও বলেন, এডিস মশা সবসময় এলাকাভিত্তিক গুচ্ছ আকারে থাকে। এই মশা যেখানে সক্রিয় সেই গুচ্ছকে চিহ্নিত করে কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে দমন করা দরকার। যেখানে ডেঙ্গু রোগী আছে সেখানে অবশ্যই ভাইরাসবাহী এডিস মশা আছে। ব্যাপকভাবে ফগিংয়ের পাশাপাশি লার্ভা ধ্বংস করতে হবে।
মশা বিতাড়ক স্প্রে ব্যবহারের পাশাপাশি তিনি নগরবাসীকে ঘুমানোর সময় মশারি টানানো, লম্বা হাতা জামা ও মোজা পরার পরামর্শ দিয়েছেন।