হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা সদরের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি করার পর দীর্ঘক্ষণ রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল্লাহ’র বক্তব্য শুনতে ওই বিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থী অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। পরে তাদেরকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকদের সহায়তায় বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।
এদের মধ্য থেকে ২ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
বুধবার (২৩ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বানিয়াচং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, বুধবার বানিয়াচং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ল্যাব পরিদর্শনে আসেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. রুহুল্লাহ ও উপজেলার মাধ্যমিক কর্মকর্তা কাওছার শোকরানার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল। যথারীতি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীত ও স্কাউট করার জন্য মাঠের মধ্যে সমবেত হয়। একপর্যায়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল্লাহ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রোটিন-ভিটামিন ও মিড-ডে মিল সম্পর্কে নানা বক্তব্য উপস্থাপন করেন তিনি।
এরই ফাঁকে দীর্ঘক্ষণ প্রচন্ড রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে ৩ ছাত্রী মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়। তাদের দেখাদেখি একে একে আরো ১১জন ছাত্রী এভাবে অসুস্থ্য হয়ে যায়। পরে শিক্ষকরা তাদের অভিভাবকদের সহায়তায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করান।
অসুস্থ্য ছাত্রীরা হল- সংগ্রাম রায়ের পাড়ার নির্মল চন্দ্রর মেয়ে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী বেশাখী চন্দ্র,সদ্যেরটুলা মহল্লার নবিউর রহমানের মেয়ে ৯ম শ্রেণির ছাত্রী সানিয়া রহমান মিম, রঘু চৌধুরী পাড়া মহল্লার রায়হান মিয়ার মেয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী মিতু আক্তার, সদ্যেরটুলা মহল্লার শাহ আলমের মেয়ে ৯ম শ্রেণির ছাত্রী অপি আক্তার, ঢালি মহল্লার নুর মোহাম্মদ মিয়ার মেয়ে ৯ম শ্রেণির ছাত্রী সুইটি আক্তার, জামালপুর মহল্লার আনোয়ার হোসেনের মেয়ে ৯ম শ্রেণির ছাত্রী শ্রাবনী আক্তার, আমিরখানী মহল্লার জাকির হোসেনের মেয়ে ৯ম শ্রেণির ছাত্রী দিপা আক্তার, খন্দকার মহল্লার আব্দুল মতিনের মেয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী হেলেনা আক্তার, মজলিসপুর গ্রামের নুর উদ্দিন মিয়ার মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী রুপালী আক্তার, রঘু চৌধুরীপাড়া মহল্লার জিতু শীলের মেয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী প্রমিথী শীল, মজলিসপুর মহল্লার আব্দুল করিম মিয়ার মেয়ে ৯ম শ্রেণির ছাত্রী মিনা আক্তার, মজলিসপুর মহল্লার কামাল মিয়ার মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ঝুমা আক্তার, কুতুবখানী মহল্লার মুনাফ লস্করের মেয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী উষা আক্তার ও কামালখানী মহল্লার কবির মিয়ার মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী জারা আক্তার। এদের মধ্য থেকে বৈশাখী চন্দ্র ও রুপালী আক্তারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স যোগে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেয়া যায়, অসুস্থ্য রোগীদের সেবা দিতে ডা. শামিমা আক্তারের নেতৃত্বে নার্স ও দায়িত্বরত চিকিৎকরা হিমশিম খাচ্ছেন। অসুস্থ্য হওয়া শিক্ষার্থীরা কেউ বমি আবার কেউ পেটের ব্যথা নিয়ে যন্ত্রণায় হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। সবাইকে স্যালাইন পুশ ও অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ভীড় সামলাতে হাসপাতালে মোতায়েন করা হয় পুলিশ।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ওই বিদ্যালয়ে জাতীয় সংগীত ও স্কাউট করানো হয় না। হঠাৎ করে ওই দিন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ অন্যান্যরা বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে আসবে বলে প্রচন্ড রোদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীত ও স্কাউট করানোর জন্য দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। আর এর ফলেই তারা অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এমনটা ই জানিয়েছেন অসুস্থ্য হওয়া কয়েক শিক্ষার্থী।
অভিভাবকরা বলছেন, স্কুলের অ্যাসেম্বলির পর রোদে স্কুলের মাঠে তাদেরকে দাঁড় করিযে রাখার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দারুজ্জামান খানের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন না ধরায় তা সম্ভব হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন খানম জানান, অসুস্থ্য হওয়া শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো সকালে না খেয়ে আসার ফলে এমনটা হয়েছে। জাতীয় সংগীত প্রতিদিন হয় বলে তিনি জানান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাওছার শোকরানা জানান, জাতীয় সংগীতের পর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলেন। এসময়ই হঠাৎ করে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায় কয়েক শিক্ষার্থী। পরে এদেরকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল্লাহ আল মোক্তাদির জানান, শিক্ষার্থীরা অনেকক্ষণ রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকার ফলে এমনটা হয়েছে। শারীরিক কোন সমস্যা নাই। আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। ভর্তি রোগীদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমরা তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেছি।
বিস্তারিত জানতে কথা হয় জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. রুহুল্লাহর সাথে। তিনি জানান, এটা তেমন কোন কারণ না। এই রোগটা বিশেষ করে মেয়েদেরই বেশি হয়। অনেক শিক্ষার্থীরাই সকাল বেলা বাড়ি থেকে না খেয়ে আসে। হয়তো দুর্বলতার কারণে এমনটা হয়েছে। পরিদর্শনের সময় আমরা মাত্র ৪৫ মিনিটের মতো সেখানে ছিলাম। আমি সেখানে থাকার সময়ই অসুস্থ্য শিক্ষার্থীদেরকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠাই। আর এখন তো শীতকালের রোদ। এই রোদের তো তেমন তেজ ও নাই যে রোদে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে অসুস্থ্য হয়ে যাবে।