বানিয়াচংয়ে নেই পুলিশের কার্যক্রম, ভোগান্তি চরমে

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর জননিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ সদস্যরা ফের থানায় যোগ দিলেও বানিয়াচংয়ের অস্থায়ী থানায় এখনো দাপ্তরিক বা মাঠে কাজ শুরু হয়নি।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ৫ আগস্ট বানিয়াচং থানায় বিভিন্ন অস্ত্র ও মালামাল লুটসহ, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুষ্কৃতিকারীরা। এতে থানায় থাকা গাড়ি, ইজিবাইক, আসবাবপত্র, মামলার আলামত ও নথিপত্র পুড়ে যায়। এরপর থেকে পুলিশের সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় সেনা সদস্যরা জননিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। গত ১৫ই আগস্ট বৃহস্পতিবার উপজেলার বিআরডিবি অফিসে থানার বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১২জন পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে যোগ দিলেও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত ওসি) এখন পর্যন্ত যোগ দেননি।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিআরডিবি অফিসের একটি কক্ষে নবাগত পুলিশ সাবইন্সপেক্টর মোড়ল মিজানুর রহমান (সাবইন্সপেক্টর) একটি ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছেন। উপজেলার দূরবর্তী বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত ভুক্তভোগীরা সাধারণ ডায়েরি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ কোনো অভিযোগও করতে পারছেন না। ফলে জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

তবে জননিরাপত্তায় থাকা সেনাসদস্যরা ভুক্তভোগীদের জন্য শান্তনামূলক কিছু কাজ করতে দেখা যায়। পুলিশ সদস্যরা যোগ দিলেও প্রয়োজনীয় উপকরণ বা কোন কম্পিউটার অপারেটর না থাকায় উপকারভোগীরা বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখানে পুলিশ সদস্যরা উপজেলা জামে মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে অনেক কষ্ট করে রাত কাটাচ্ছেন। অস্থায়ী থানায় থাকা-খাওয়ারও কোনো সুব্যবস্থা নেই।

উপজেলার বলাকিপুর গ্রামের ভুক্তভোগী সাংবাদিক সুরুজ আলী জানান, ‘আমার এলাকা থেকে একটি মেয়ে হারিয়ে যাওয়ায় সাধারণ ডায়েরি করতে আসছিলাম। এসে দেখি থানার অফিসার ইনচার্জ এবং পুলিশ পরিদর্শকও নেই। এমনকি পুলিশের কোনো কার্যক্রমও নেই। বর্ষা মৌসুমে অনেক দূর থেকে এসে জনগণ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।’

উপজেলার খাগাউড়া গ্রামের ভুক্তভোগী মো. আবু হানিফ জানান, ‘আমি মাস খানেক পূ্র্বে পাসপোর্টের আবেদন করেছিলাম। এখান থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশনের রিপোর্ট না গেলে পাসপোর্ট পাব না। দুই দিনের মধ্যে পাসপোর্ট নিয়ে এম্বেসি অফিসে যেতে হবে। থানায় কোনো কার্যক্রম না থাকায় বিরাট সমস্যায় পড়েছি।’

মুরাদপুর থেকে আসা অপর এক ভুক্তভোগী মো. আরিফ মিয়া জানান, ‘গতকাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য থানায় এসে দেখি কোনো কার্যক্রম নেই। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য পুলিশ সুপারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে বিষয়টি আলাপ করলে তিনি বলেন এটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাজ। যেদিন তিনি যাবেন সেদিনই কাজ করে নিবেন।।’

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) পলাশ রঞ্জন দেব জানান, ‘৫ আগস্ট থানায় হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে সবকিছু পুড়ে যাওয়ায় থানার কোনো কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। দ্রুত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণসহ একজন কম্পিউটার অপারেটর ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ওসি নিয়োগের কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনো ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিয়োগ হয়নি। পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রহিম নিয়োগ হয়েছে। শীঘ্রই যোগদান করবেন বলে জানান তিনি।