সরকার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ এখনও শেষ হয়নি। যেটুকু কাজ হয়েছে তাতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দায়সারা কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা, যার কারণে ফসলরক্ষা নিয়ে রয়েই গেল হাওরপাড়ের কৃষকদের আতঙ্ক। এছাড়া চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার ৫টি হাওরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রকল্প গ্রহণ না করায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র মতে, কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাব অনুযায়ী গত শুক্রবার পর্যন্ত পুরো উপজেলায় প্রায় ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছর উপজেলায় বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষায় ৩৭টি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ বাস্তবায়ন করছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। এসব প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হলেও কাজ হয়নি সন্তোষজনক পর্যায়ে। এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
জানা যায়, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে নোয়ারাই, জাউয়াবাজার, চরমহল্লা, উত্তর খুরমা, দক্ষিণ খুরমা ও সিংচাপইড় ইউনিয়নের ৩৭টি প্রকল্পের অধীনে ফসল রক্ষায় প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকা। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির অনুকূলে সর্বাধিক ২৫% টাকা অগ্রিম হিসেবে তৃতীয় কিস্তি প্রদান করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু উপজেলার হাওর রক্ষায় ৩৭টি প্রকল্পের মধ্যে অগ্রিম কোনো টাকাই দেওয়া হয়নি। এ পর্যন্ত সবক’টি প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা পরিশোধ করা হলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাউবো থেকে আর কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। মূলত এ কারণেই অধিকাংশ পিআইসিতে কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।
এরই মধ্যে ৫টি হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় দ্রুত বাঁধ নির্মাণ না করায় দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের স্থানীয় কৃষকদের পক্ষে সম্প্রতি ইউএনও বরাবরে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন চেচান গ্রামের মুহিবুর রহমান তালুকদার টুনু।
তিনি জানান, বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের পানিতে এখানকার শত শত একর জমি হুমকিতে পড়ে। হাওরের অনেক ফসল বোকার ভাঙা ব্রিজ থেকে রাউলি ব্রিজ পর্যন্ত সবক’টি ব্রিজের নিচ দিয়ে পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে যায়। বোরো মৌসুমে উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের চাউলির হাওরের অন্তর্ভুক্ত জল্লার হাওর, যমুনাখাই, পাতলা চুরা, ধল হাওর, বারমুখা বড়বিল, মজবন্দ হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় বেড়িবাঁধ ও আগাম পানি ঢোকার প্রবেশ মুখ বন্ধ করা জরুরি হলেও পাউবো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
উপজেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলন কমিটির নেতারা বলেন, প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা ব্যক্তিরাই অধিকাংশ প্রকল্পের কাজে যুক্ত। তাঁরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে নিজেদের মতো কাজ করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রকল্প কমিটির সভাপতি নুরের জামান চৌধুরী বলেন, প্রকল্পগুলোর কাজ এ পর্যন্ত ৮৬ ভাগ শেষ হয়েছে। বাঁধ মেরামত কাজ শেষ করতে ৮ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।