প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সিলেট জেলা কমিটি নিয়ে বিতর্ক যেনো শেষই হচ্ছে না। পাল্টাপাল্টি জেলা সম্মেলন, একাধিক বহিষ্কার, বিবৃতি চলছেই। যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি করছে বিভ্রান্তি, ডালপালা মেলছে বিতর্ক।
এসবের জবাব দিতে রবিবার (১৫ অক্টোবর) সিলেটের নজরুল একাডেমিতে ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা শাখার ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করেছে সংগঠনের একাংশ।
সংগঠনের নামধারী অপর অংশের বিভ্রান্তির জবাব দিতেই এই সংবাদ সম্মেলন বলে জানিয়েছেন উপস্থিত নেতৃবৃন্দ।
আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ হাসান প্রান্তিক জানান, ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের অতীতের ধারাবাহিকতা ও ছাত্র ইউনিয়নের গঠনতান্ত্রিক নিয়মে গত ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলার ৩৬তম জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শিশুসাহিত্যিক কবি তুষার কর। অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি লুনা নূর, সাবেক ছাত্র নেতা ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আরশ আলী, আনোয়ার হোসেন সুমন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সেই ৩৬তম সম্মেলনে দ্বীপংকর সরকারকে সভাপতি, নাহিদ হাসান প্রান্তিককে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে কমিটি গঠন করা হয়। নির্বাচিত কমিটির সদস্যদের শপথ পাঠ করান বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ। পরবর্তীতে এই কমিটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
নাহিদ হাসান প্রান্তিক আরও বলেন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের ৩৬তম সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর পরই আগের কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মনীষা ওয়াহিদ ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর একটি আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। যা সংগঠনের নিয়মবহির্ভূত। তখন সেই আহ্বায়ক কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে জেলা কমিটি, মহানগর কমিটি, এমসি কলেজ, মদন মোহন কলেজ, দক্ষিণ সুরমা, বিয়ানীবাজার, লাক্কাতুরা কমিটি একযোগে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এর দুইদিন পর ১২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্র বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে মনীষা ওয়াহিদকে ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা থেকে বহিষ্কার করা হয়। একইসাথে গঠনতন্ত্রের ধারা ৫৬-এর ক অনুযায়ী ৩৬তম জেলা সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে মনীষা ওয়াহিদকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ হাসান প্রান্তিক বলেন, সম্প্রতি বহিষ্কৃত মনীষা ওয়াহিদ ৩৬তম সম্মেলনের নামে ফের ভুয়া একটি সম্মেলন আয়োজন করেছেন বলে আমরা সংবাদ মাধ্যম মারফত জানতে পেরেছি। ষড়যন্ত্রের এই সম্মেলনে একটি স্পর্শকাতর বিষয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। যা ছাত্র ইউনিয়নের দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করে এবং আমরা এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি।
এসময় ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রান্তিক এসব ষড়যন্ত্রে আস্কারা দেয়ার অভিযোগে বন্ধুপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সিলেট জেলার কতিপয় নেতবৃন্দকে দায়ী করেন। এসময় তিনি, ইতিহাস ভুলে না যেতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, একটা সংগঠিত কমিউনিস্ট বিরোধী শক্তি ছাত্র ইউনিয়নসহ বাম আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাদেরকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইতিহাসের সেই ফিনিক্স পাখি যাকে কখনোই ধ্বংস করা যায় না। ৫২, ৬২, ৬৬, ৬৯, ৭০, ৭১, ৯০ ও ২০১৩-এর লড়াই ও সংগ্রাম সেই অঙ্গীকার স্মরণ করিয়ে দেয়।
এসময় ছাত্র ইউনিয়নের আরেক বহিস্কৃত নেতা হাসান বক্ত চৌধুরী ও মনীষা ওয়াহিদের ব্যক্তিগত বিরোধের প্রসঙ্গ টেনে প্রান্তিক বলেন, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে হাসান বক্ত চৌধুরী কাউছার প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনীষা ওয়াহিদ এবং তার আশ্রয় দাতাদের ব্যক্তিগত আক্রমণের পাশাপাশি কুরুচিপূর্ণ আচরণ প্রদর্শন করেন যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদ এই ধরনের অসংবেদনশীল আচরণের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আমরা ছাত্র ইউনিয়নের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের প্রতি অবিচল থেকে রাজনৈতিক লড়াইয়ের মাধ্যমে এই সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে চাই। সুতরাং হাসান বক্ত চৌধুরী কাউছারের ঘৃণিত আচরণ ছাত্র ইউনিয়নের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। আমরা বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদ এর দায়ভার নিব না।
এসময় তারা মনীষা ওয়াহিদের অপতৎপরতার বিষয়ে সচেতন থাকার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান, একই সাথে সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-শিক্ষা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে একই ধারার গণমুখী-বিজ্ঞানভিত্তিক সেকুলার শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের দাবিতে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রগতিমুখী সমাজ বিনির্মাণে নিজেদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।