আকস্মিক বন্যা মোকাবিলায় সিলেট নগরীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুটো দাবির কথা জানালেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
মঙ্গলবার (২১ জুন) সিলেট সার্কিট হাউসে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় মেয়র প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে এই বক্তব্য দেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনার আগমনের মধ্যদিয়ে আজকে গোটা সিলেট বিভাগ আশার আলো দেখছে এবং মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে। আমি গতকাল পর্যন্ত দেখেছি যে, মানুষ যখন শুনছে প্রধানমন্ত্রী আপনি আসছেন, তখন মানুষ মনে করেছে তারা যে ধরণে অসহায়ত্ব বোধ করছে সেগুলো আপনি শুনবেন এবং নিশ্চয়ই বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা নিবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘সিলেট মহানগরীতে প্রায় ৮০ ভাগ এলাকাই বন্যা কবলিত হয়েছে। এধরণে বন্যা এখানে এর আগে হয়নি কখনও। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমরা যে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র দিয়েছিলাম, সেগুলোতেও বন্যার পানি উঠে যায়। ফলে সেন্টারগুলোও অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়।’
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলররা একযোগের তারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাজ করেছেন। আমরা ৮০টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছি। আমরা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নৌকা ক্রয় করেছি।
আমাদের সঙ্গে অদ্যবদি যোগাযোগ রেখেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী আমি সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয় আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সিলেট শহরে নদীবর্তি এলাকাগুলোতে ২৪ ঘন্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৯২২ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
শত ব্যস্ততার মধ্যে আপনি এখানে এসেছেন- আমাদের একটি ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি রিপোর্ট অনুযায়ী, সুরমা নদীর সিলেট মহানগর এলাকায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ কাম ওয়াকওয়ে এবং হলদি ছড়া, গোয়ালি ছড়া, মালনী ছড়া, বৈঠা খালের সাথে সুরমা নদী সংযোগ স্থলে স্লুইস গেট এবং পাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা গেলে আকর্ষিক বন্যা এবং পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা থেকে সিলেট মহানগরী রক্ষা পাবে। কারণ ২ থেকে আড়াই ফুট উঁচুতে যেসব এলাকায় সুরমা নদীর পাশদিয়ে আমরা ওয়াকওয়ে করেছিলাম, সেসব এলাকায় পানি ঢুকে নাই।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অত্যন্ত প্রশংসা করতে চাই। কারণ তারা অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের সঙ্গে থেকে বরইকান্দিতে বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ দিয়েছিল, তাতেই আমরা বরইকান্দি বিদ্যুৎ উপ কেন্দ্রে চালু করতে পেরেছি। কাজেই সুরমা নদী তীরবর্তী এই ১৫ কিলোমিটার এলাকায় যদি আমার বাঁধ এবং ওয়াকওয়ে তৈরি করতে পারি তবে আমাদের মহানগরী এলাকা নিরাপদ হয়ে যাবে। এর মধ্যে এই বিভাগীয় শহরের অনেক গুলো সরকারের অতিগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) রক্ষা পাবে।
আর বন্যা পরবর্তী সময়েও আমাদের শুকনো খাবারের প্রয়োজন। সামর্থ্য থাকলেও আমরা সিলেটের শুকনো খাবার পাচ্ছি না। আমার শ্রীমঙ্গল থেকে আনার চেষ্টা করছি, তাও খুবই অল্প সংখ্যক। ঢাকা থেকে যদি খাবার না যায় তবে এখানে শিশু খাদ্যের অভাব দেখা দিবে।
আর এখন কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী অহেতুক চিড়া, মুড়ি গুড়ের দাম বৃদ্ধি করে ফেলেছেন। সেই ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে এসব আনা গেলে খুবই ভালো হয়।
এবারের বন্যায় মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে সকল রাজনীতিবিদ সহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিলে ভালো হয়। কারণ কিছু কিছু যায়গা খুবই দুর্গম। সাধারণের যাওয়া সম্ভব নয়। সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিলে সবাই ত্রাণগুলো পাবে।
আমি প্রধানমন্ত্রী কাছে দুটি দাবি করছি। সিসিকে ৪টি মেডিকেল টিম আমরা করেছি। সিলেট সিভিল সার্জনকে দিয়ে যদি আরো ৭/৮ টা মেডিকেল টিম দেয়া যায় খুবই উপকার হয়। কারণ বন্যার পানি নামার সাথে সাথে পানিবাহিত নানা সংক্রামক ব্যাধি ছড়াবে। ফলে মেডিকেল টিমগুলো নাগরিকদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারবে। এক্ষেত্রে আপনার নির্দেশনা প্রত্যাশা করছি।
সিলেট মহানগরীতে মাত্র ৩০ টন চাল দেয়া হয়েছে। আর আমরা কিছু পাইনি। মহানগরীর প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি।
সিসিক মেয়র আরিফুল হকের বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, কেউ না খেয়ে থাকবে না ইনশাআল্লাহ।